চমেকে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস উদযাপন: স্ট্রোক প্রতিরোধে সচেতনতা জোরদারের আহ্বান

চট্টগ্রাম

নিজস্ব প্রতিবেদক:

স্ট্রোক প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও দ্রুত চিকিৎসার গুরুত্ব তুলে ধরতে ২০২৫ সালের বিশ্ব স্ট্রোক দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) নিউরোসার্জারি বিভাগ আয়োজন করেছে দুই দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি।

সোমবার (২৭ অক্টোবর) সাইকেল র‍্যালির মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী এই উদযাপনের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।

চমেক ক্যাম্পাস থেকে শুরু হওয়া সাইকেল র‍্যালিটি হাসপাতালের মূল মাঠে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে অনুষ্ঠিত হয় সাইকেল ফেস্ট, ক্রিকেট ও ফুটবল টুর্নামেন্টসহ বিভিন্ন ক্রীড়া আয়োজন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. সাইফুল আলম এবং সঞ্চালনা করেন সহকারী অধ্যাপক ও উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ডা. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তাসলিম উদ্দিন, উপাধক্ষ্য অধ্যাপক ডা. আব্দুর রব। উপস্থিত ছিলেন নিউরোসার্জারি বিভাগের ইউনিট প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. সানাউল্লাহ শামীম, সহযোগী অধ‍্যপাক ডা. মাহফুজুল কাদের, সহকারী অধ্যাপক ডা. ওমর ফারুক,উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও সহকারী অধ্যাপক ডা. সিরাজুল মুনির অহি, সহকারী অধ‍্যাপক ডা. মইনুদ্দীন জাহেদ, সহকারী অধ্যাপক ডা. কামাল হোসেন, ডা. মাজেদ সুলতান, ডা. সমীর, আবাসিক সার্জন ডা. ইমরান হোসেন, ডা. আলাউদ্দিন, ডা. নারায়ন ধর, ডা. মির্জা, ডা. শিহাব, ডা. শামীমা, ডা. খুরশীদ, ডা. আয়াতুল আমিন, ডা জয়দীপ, ডা. সৌমেন, ডা. রাখাল, ডা. আশিক, ডা. মুনীর, ডা. নূর, ডা. সজীব, ডা. জিসান,ডা. দেবব্রত, ডা. হিমা, ডা. ইরফান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমরা অনেক সময় স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণগুলোকে অবহেলা করি—যেমন হঠাৎ কথা জড়ানো, শরীরের একপাশ অবশ হয়ে যাওয়া বা দৃষ্টিতে ঝাপসা দেখা। এই মুহূর্তগুলোই আসলে ‘গোল্ডেন আওয়ার’। দ্রুত হাসপাতালে নিতে পারলে রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে আমরা স্ট্রোক প্রতিরোধ ও রিহ্যাবিলিটেশন বিষয়ে চমেকের নিউরোসার্জারি বিভাগের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। আমাদের লক্ষ্য—‘স্ট্রোক-মুক্ত চট্টগ্রাম’।

অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন, যার অর্ধেকেরও বেশি সময়মতো চিকিৎসা না পাওয়ায় মৃত্যুবরণ করেন বা স্থায়ী অক্ষমতায় ভোগেন। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান ও স্থূলতা এখনো প্রধান ঝুঁকির কারণ।’

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এখন স্ট্রোক চিকিৎসার জন্য ২৪ ঘণ্টার জরুরি সেবা চালু করেছে। আমরা চাই, মানুষ দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসা নিক—এটাই এই দিবসের মূল বার্তা।’

নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. মো. সাইফুল আলম বলেন, ‘স্ট্রোকের ৮০ শতাংশই প্রতিরোধযোগ্য। নিয়মিত রক্তচাপ ও রক্তে শর্করা পরীক্ষা করা, ধূমপান বন্ধ করা, লবণ ও তেল কম খাওয়া, এবং দৈনিক অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা—এই ছোট পরিবর্তনগুলোই জীবন বাঁচাতে পারে।’

ডা. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘স্ট্রোক প্রতিরোধ মানেই জীবন বাঁচানো। আজকের কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হলো—সাধারণ মানুষকে বোঝানো যে স্ট্রোক হঠাৎ ঘটে, কিন্তু এর ঝুঁকি প্রতিদিন তৈরি হয়। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান বা অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন—এসবের প্রতি সচেতন না থাকলে যেকোনো মুহূর্তে স্ট্রোক হতে পারে। নিউরোসার্জারি বিভাগ শুধু চিকিৎসা নয়, প্রতিরোধমূলক কাজেও ভূমিকা রাখতে চায়।’