কক্সবাজার সীমান্তই মাদক প্রবেশের প্রধান রুট, ৮০ শতাংশ মাদক আসে সাগরপথে

কক্সবাজার

কক্সবাজার প্রতিনিধি

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে মাদক চোরাচালানের জন্য কক্সবাজার সীমান্তকে প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার শহরের বিজিবি সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) রামু সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ মহিউদ্দীন আহমেদ।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, নাফ নদী ও সাগরপথ হয়ে মহেশখালী, বাঁশখালী, কুতুবদিয়া, আনোয়ারা ও কুয়াকাটা দিয়ে ইয়াবা, ক্রিস্টাল মেথসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক দেশে প্রবেশ করছে। ধারণা করা হয়, মোট মাদকের প্রায় ৮০ শতাংশ আসছে সাগরপথে। আগে এটি শুধু অনুমান ছিল, বর্তমানে ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টের মাধ্যমে এ রুট ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে।

এদিকে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তে বিজিবির কড়া নজরদারির কারণে বিকল্প পথ হিসেবে ব্যবহার বাড়ছে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত। তবে দুর্গম ভূখণ্ড ও দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা এ সীমান্তে নজরদারি কঠিন করে তুলেছে। গত ১৫ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত কক্সবাজার রিজিয়নের অধীনস্থ ব্যাটালিয়নসমূহ বিশেষ অভিযানে ইয়াবা ২৮ লাখেরও বেশি পিস, ক্রিস্টাল মেথ ৮১৬ গ্রাম, বিয়ার ১৬৮ ক্যান, বাংলা মদ প্রায় ৩৬৬ লিটার ও গাঁজা ২ কেজি ৪২৫ গ্রাম উদ্ধার করেছে। এসব অভিযানে ১৮৮ জন আসামি আটক হয়েছে। উদ্ধারকৃত মাদকের সিজার মূল্য প্রায় ৮৯ কোটি টাকা।

তিনি আরো জানান, শুধু মাদক নয়, এ সময়ে বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদও উদ্ধার করেছে বিজিবি। এর মধ্যে রয়েছে দেশীয় এক নলা বন্দুক ৬টি, একে-৪৭ রাইফেল, এসএলআর, জি-৩ রাইফেল, বিদেশি রিভলবার ও গ্রেনেডসহ বিভিন্ন অস্ত্র। আটক হয়েছে ৫ জন অস্ত্রধারী আসামি। এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদের সিজার মূল্য ২২ লাখ টাকার বেশি।

অভিযান চলাকালে বিজিবি বার্মিজ গরু ২২৬টি জব্দ করেছে, যার সিজার মূল্য প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। এছাড়া আরও ৬ কোটির বেশি টাকার বিভিন্ন চোরাচালানি মালামালও আটক করা হয়েছে। এ সময়ে অভিনব কৌশলে ১৪৭টি ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন পরিচালনা করে বিজিবি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- গত ১৪ আগস্ট কক্সবাজার রিজিয়নের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় মালিকবিহীন ১ হাজার ৩২২ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য ধ্বংস। যোগ করেন কর্নেল মহিউদ্দীন।

বিজিবির এই কর্মকর্তা জানান, সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত টহল, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা এবং জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে মাদক ও চোরাচালান দমনে বহুমাত্রিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান, রামু ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী মাহতাব উদ্দিন আহমেদসহ বিজিবির অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।