কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজারের মহেশখালীতে সাত বছর বয়সী শিশু মাহিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে মো. সোলাইমান (৩২) নামের এক যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মোহাম্মদ ওসমান গণি এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত সোলাইমান টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চাকমারকুল এলাকার মৃত ছৈয়দ করিমের ছেলে। রায় ঘোষণার সময় সে আদালতে উপস্থিত ছিল।
নিহত মাহিয়া (৬) মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ সাইরারডেইল এলাকার মোহাম্মদ আতাউল্লাহর মেয়ে। সে দক্ষিণ সাইরারডেইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল।
কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন টিটু জানিয়েছেন, নিহত শিশুর বাবা আয়াত উল্লাহ বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে আদালত আজ এ রায় দিলেন।
মামলার বাদী এবং ভিকটিমের পিতা আতাউল্লাহ জানান, তার মেয়ে মাহিয়া গত ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর দুপুরে স্কুল থেকে ফেরার পর বাড়ীর পাশে খেলাধুলা করছিল। এসময় তাকে অপহরণ করা হয়। পরে তাকে ধর্ষণ ও হত্যা করে মৃতদেহ গুম করা হয়। পার্শ্ববর্তী পেকুয়া উপজেলার করিয়ারদিয়া এলাকা থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মাহিয়ার পিতা ২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর মহেশখালী থানায় মামলাটি দায়ের করেন। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ার পর আজ এ রায় দেয়া হলো।
আদালতের নথিপত্র মতে, ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর বিকেলে বিদ্যালয় থেকে ফিরে বাড়ির সামনে খেলছিল ওই শিশু। এ সময় কেক ও জুসের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ঘরে ডেকে নেয় সোলাইমান। সেদিন সোলাইমানের স্ত্রী বাড়িতে ছিলেন না। একপর্যায়ে শিশুটিকে ধর্ষণ করলে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তখন সোলাইমান শিশুটিকে একটি লাগেজে ভরে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের করিয়ারদিয়া বাঁধে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে লাগেজ খুলে দেখে শিশুটি মারা গেছে। এরপর কাদামাটিতে লাশ পুঁতে রাখে সে। শিশুটিকে হত্যা করার পরও পরিবারের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল সোলাইমান। ওইদিন রাতেই শিশুটির বাবার কাছে ফোন করে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এব্যাপারে শিশুর পরিবার থানায় নিখোঁজ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। পরে পুলিশ তদন্তে অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যায়। শিশুর বাবা ৩ ডিসেম্বর রাতে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় মামলা দায়ের করেন। মুক্তিপণের জন্য করা মোবাইল ফোন কলের সূত্র ধরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ১০ ডিসেম্বর বিকেলে সোলাইমান ও তার স্ত্রীকে আটক করে পুলিশ।
তবে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ না পাওয়ায় স্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মহেশখালীর জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শোয়েব উদ্দিন খানের আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে সোলাইমান পুরো ঘটনার দায় স্বীকার করে।
এ রায়ে ভুক্তভোগী শিশুর পরিবার, আইনজীবী এবং রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। তবে, আসামি দাবি করেছে, সে ন্যায়বিচার পায়নি। তাই উচ্চ আদালতে আপিল করবে।