কক্সবাজার সম্মেলন: রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার ৭ দফা প্রস্তাব

উখিয়া কক্সবাজার টেকনাফ

তারেকুর রহমান, কক্সবাজার ||

রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে একটি ‘বাস্তব রূপরেখা’ তৈরিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সদয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যেন মর্যাদা ও নিরাপত্তার সঙ্গে দ্রুত নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে, সে লক্ষ্যে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সোমবার (২৫ আগস্ট) সকালে কক্সবাজারের ইনানীতে শুরু হওয়া ‘রোহিঙ্গা বিষয়ক অংশীজন সংলাপ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ২০১৭ সালের এই দিনে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজও নতুন রোহিঙ্গাদের আগমন অব্যাহত রয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন—“রাখাইন সম্প্রদায়ের শেষ চিহ্নটুকু বিলীন হওয়ার জন্য আমরা অপেক্ষা করতে পারি না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখনই এগিয়ে আসতে হবে।”

ড. ইউনূস জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে; এর মধ্যে প্রতিবছর ২২ হাজার শিশু ক্যাম্পে জন্ম নিচ্ছে। কক্সবাজার ইতোমধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী ক্যাম্পে পরিণত হয়েছে। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, সমাজ ও সুশাসনে বিরাট প্রভাব পড়ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে যে সাতটি প্রস্তাব দেন তাহলো-

১. রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য দ্রুত একটি বাস্তব রোডম্যাপ প্রণয়ন।
২. জীবন রক্ষাকারী কাজ চালিয়ে যেতে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার অব্যাহত ও টেকসই অর্থায়ন।
৩. মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর সব ধরনের নিপীড়ন অবিলম্বে বন্ধ করা এবং অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতদের ঘরে ফেরানো।
৪. মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সহিংসতা বন্ধ ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে সংলাপের প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা।
৫. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে আসিয়ানের কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করা।
৬. আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অংশীজনদের জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।
৭. ন্যায়বিচার ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, কক্সবাজার সম্মেলনের আলোচনার ফলাফল আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিতব্য রোহিঙ্গা বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে গুরুত্ব পাবে।

এ সময় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বক্তব্য রাখেন। কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও রোহিঙ্গা নেতারাও অংশ নেন সম্মেলনে।

এর আগে সকালে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছে প্রধান উপদেষ্টা সড়কপথে ইনানীর হোটেল বে-ওয়াচে আসেন। আগামীকাল (২৬ আগস্ট) অংশগ্রহণকারীরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন।