ভাষাসৈনিক ও বরেণ্য শিক্ষাবিদ মাস্টার মোহাম্মদ আব্দুস শুকুরের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ

টেকনাফ

দরিয়া নগর ডেস্ক

বরেণ্য শিক্ষাবিদ, ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মাস্টার মোহাম্মদ আব্দুস শুকুরের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৯ সালের এই দিনে ৭৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন বর্ণাঢ্য এ শিক্ষাবিদ। শিক্ষকতার মহান পেশায় তিনি জীবনের ৪৪ টি বছর অতিবাহিত করেন।

এ মহান শিক্ষাবিদ ১৯৬০ ইংরেজি সালে চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ থেকে ইংরেজি মিডিয়ামে বি,কম পাস করার পর বাণিজ্যিক ব্যাংক সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভালো চাকুরির সুযোগ পেয়েও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, আত্মীয় স্বজন ও পিতার আহ্বানে টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেন।

টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন মানুষ গড়ার এ কারিগর। তাঁর হাত ধরে জ্ঞান অর্জন করে বহু ছাত্র-ছাত্রী পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অলংকৃত করেন এবং সমাজ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে টেকনাফে একজন অন্যতম সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। এসময় পাক হানাদার বাহিনী রাজাকারদের সহায়তায় তাঁর বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেন এবং তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি বার্মায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। স্বাধীনতার প্রাক্কালে অন্যদের সাথে তিনি দেশে ফিরে আসেন।

এছাড়া ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন ছাত্র জীবনে। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসন কর্তৃক ২০১৮ ভাষা সৈনিকের সম্মাননা লাভ করেন। এর আগে ২০১৫ সালে কালের কণ্ঠ পত্রিকা থেকে গুণিজন সম্মাননা লাভ করেন তিনি।

পিতা ইসমাইল সওদাগর আর মাতা গোলচেমন এর গর্ভে ১ লা আগস্ট, ১৯৩৯ সালে টেকনাফে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত ধার্মিক ও সৎ এই মানুষটি হজব্রত পালন করার সৌভাগ্য লাভ করেন। তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন টেকনাফের সম্ভ্রান্ত পরিবারের মহীয়সী নারী বাংলা, উর্দু, আরবি ভাষায় পারদর্শী খালেদা বেগমের সাথে।

টেকনাফের শিক্ষার প্রতিকূল পরিবেশে তাদের সাত সন্তান উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ডাক্তার-অধ্যাপক-সাংবাদিক ও শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত থেকে দেশ ও সমাজের আলোকবর্তিকা হয়ে কাজ করে চলেছেন।

অবসরকালীন সময়ে ২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি ৭৯ বছর বয়সে টেকনাফ অলিয়াবাদের নিজ বাড়িতে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করেন তিনি। একই দিন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে টেকনাফ পৌর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

সেই থেকে প্রতিবছর তাঁর মৃত্যুবাষিকীর এই দিনটিকে স্মরণ করেন তাঁর অগণিত ছাত্র-ছাত্রী ও পরিবার ও আত্মীয়স্বজন।

মহান এ শিক্ষাবিদের জীবনী :

মোহাম্মদ আব্দুস শুকুর পিতার নাম মোহাম্মদ ইসমাইল সওদাগর মাতার নাম মরহুম গোলচেমন জন্মতারিখ- ১ লা আগস্ট , ১৯৩৯ সাল জন্মস্থান টেকনাফ থানা , কক্সবাজার –

  • শিক্ষাজীবন * ম্যাট্রিকুলেশন : পাসের সাল- ১৯৫৫ ইং পেকুয়া জি . এম . সি ইনস্টিটিউট *
  • এফ.ডি.সি ( Final Day Course ) : পাসের সাল ১৯৫৮ ইং চট্টগ্রাম সরকারি বাণিজ্য কলেজ *
  • বি.কম : পাসের সাল ১৯৬০ ইং চট্টগ্রাম সরকারি বাণিজ্য কলেজ *
  • বি . এড ( ১৯৬৬-৬৭ইং ) : কুমিল্লা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ
  • কর্মজীবন – → ১৯৬০ সালে ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংকে চাকরি গ্রহণ করলেও যোগদান করেননি ।
  • ১৯৬০ সালে টেকনাফ জুনিয়র হাই স্কুলে ( বর্তমানে টেকনাফ পাইলট হাই স্কুল ) সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন ।
  • ১৯৬০ সালের ২রা সেপ্টেম্বর টেকনাফ জুনিয়র হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন ।
  • ( ১৯৬৬- ৬৭ সালে বি.এড করেন )
  • ১৯৬৭-১৯৭২ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টেকনাফ উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক আবার কোন কোন সময় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন ।
  • মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ থেকে ২০শে ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে দায়িত্ব পালন করেননি ।
  • ১৯৭২ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি টেকনাফ হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৮০ সালের জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
  • ১৯৮০ সালের আগস্ট মাসে চট্টগ্রাম এম . ই . এস হাই স্কুলে সিনিয়র শিক্ষক পদে যোগদান করেন ।
  • ১৯৮৪ সালের আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে উখিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৯৬ সালের ২১শে আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন ।
  • ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নবি হোসাইন জুনিয়র হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৯৯ সালের ৩১শে জুলাই পদত্যাগ করেন ।
  • এয়ারপোর্ট হাই স্কুলে ১৯৯৯ সালের আগস্ট মাসে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন এবং ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অবসর গ্রহণ করেন ।

মৃত্যু ৯ ই জানুয়ারি , ২০১৯ সাল ।

  • ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে কালের কণ্ঠ পত্রিকার সম্মাননা
  • ২০১৮ সালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কর্তৃক ভাষা সৈনিক হিসেবে সম্মাননা লাভ।