ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া
বাজারে সবজির দাম পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকায় আগাম শীতকালীন সবজি উৎপাদনে দেড় মাস আগেই মাঠে নামেন চকরিয়ার কৃষকেরা। আবাদকৃত রকমারি মৌসুমী এই সবজি ইতোমধ্যে বাজারেও মিলছে। বাজারে বাজারে খুচরা দোকানগুলো ভরে ওঠেছে শীতকালীন সবজিতে। এতে সবজির দাম মোটামুটি নাগালের ভেতর আসতে শুরু করায় অনেকটা খুশি ভোক্তা সাধারণও।
সরেজমিন দেখা গেছে, শীতকালীন রকমারি সবজিতে ভরে ওঠেছে চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর দুই তীরসহ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার বিস্তীর্ণ জমি। বর্ষা মৌসুমের শেষের দিকে বৃষ্টিপাত তেমন না হওয়ায় আগাম শীতকালীন সবজি উৎপাদনে মাঠে নামেন প্রান্তিক কৃষকেরা। এখন উৎপাদিত সবজির ন্যায্য দাম পেয়ে বেশ খুশি তারা। আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে কৃষক পরিবারগুলো।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাতামুহুরী নদীর দুই তীরজুড়ে বর্তমানে বিরাজ করছে সবুজ সবজির সমারোহ। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। এক সময়ের ধু ধু বালুচর এখন আচ্ছাদিত হয়ে পড়েছে সবুজ সবজি ক্ষেতে। ক্ষেত থেকে রকমারি সবজি তুলে বাজারে বিক্রি ও দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই শীতকালীন আগাম সবজির আবাদে নেমে পড়েন লক্ষাধিক প্রান্তিক কৃষক। এবার শীতকালীন আগাম সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ৩৩৫০ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে মরিচ, বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, লাল শাক, পুই শাক, ধনিয়া পাতা, শিম, বরবটি, ঢেঁড়শ, মিষ্টি কুমড়া, তিত করলাসহ রকমারি সবজি আবাদের সেই লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হওয়ার পথে। সেই হিসেবে এবার প্রান্তিক কৃষকেরা তাদের জমিতে সবজি ফলিয়ে আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হচ্ছেন।
কৃষি বিভাগ আরো জানান, শীতকালীন সবজির পাশাপাশি রবি শস্যেরও আবাদ করা হয়েছে। তম্মধ্যে আলু, মিষ্টি আলু, সরিষা, ভুট্টাসহ বিভিন্ন রবি শস্যের আবাদে নেমে পড়েন প্রান্তিক কৃষকেরা। কৃষি বিভাগ ২৬৩৬ হেক্টরে এই রবি শস্যের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে।
চকরিয়া কৃষি বিভাগের উন্নয়ন শাখার কর্মকর্তা রাজীব দে জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর দুই তীরজুড়ে আগাম শীতকালীন সবজি চাষে নামার জন্য প্রান্তিক কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। একইসাথে নানা প্রণোদনা–সহায়তা দিয়ে আগেভাগে মাঠে নামানো হয় মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের পৌরসভার বিভিন্ন ব্লক ছাড়াও বিএমচর, কোনাখালী, পূর্ব বড়
ভেওলা, সাহারবিল, কৈয়ারবিল, কাকারা, সুরাজপুরু–মানিকপুরসহ অন্তত ১০টি ইউনিয়নের কৃষককে। এতে বর্তমানে বেগুন, মরিচ, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলাসহ শীতকালীন আগাম সবজি বাজারে তুলতে প্রান্তিক এসব কৃষক এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন মাঠে। রাজীব দে আরও জানান, শীতকালীন সবজি ছাড়াও বছরের বারো মাস এসব কৃষক মাতামুহুরী নদীর দুই পয়েন্টে রাবার ব্যারেজ দিয়ে আটকানো মিঠাপানি ব্যবহার করে তীরের উর্বর জমিতে রেকর্ড পরিমাণ নানান রকমারি ফসল উৎপাদন করে আসছেন।
কৈয়ারবিল ইউনিয়নের মাতামুহুরী নদীতীরের দ্বীপকূল এলাকার কৃষক আহসান উল্লাহ জানান, প্রতিবছর মাতামুহুরী নদীর তীরের প্রায় তিনকানি জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ করেন তিনি। এবারও এই পরিমাণ জমিতে শীতকালীন আগাম রকমারি সবজির চাষ করেছেন। কৃষি বিভাগের দেওয়া পরামর্শে আগেই মাঠে নেমে পড়েন তিনি। এতে ইতোমধ্যে ক্ষেত থেকে বেগুন, মরিচ, ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রিও শুরু করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং বন্যা না হওয়ায় আগাম সবজি বিক্রি করে অন্য বছরের চাইতে প্রায় দুই লক্ষ টাকা বেশি আয় হবে এবার, এমনটাই জানালেন তিনি।
চকরিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের আমান পাড়ার কৃষক সিরাজ মিয়া বলেন, আগাম শীতকালীন সবজি চাষের জন্য লোক নিয়োগ দিয়ে প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করানো হয়েছে। একমাস আগে থেকেই বীজতলা তৈরি, বীজবপন, সেচ দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার করা, কীটনাশক ও সার প্রয়োগসহ আনুষঙ্গিক কাজও শেষ করা হয়। এতে বাজারে রকমারি সবজির সমারোহ হয়েছে।
পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রেজাউল করিম বলেন, আমার ওয়ার্ডের সিংহভাগ মানুষ কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিবছর শীতকালীন সবজির আবাদ করেই তারা স্বাবলম্বী হন। তাই আগাম সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয় তাদের। এতে এখন শীতকালীন সবজি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। অন্যান্য বছরের মত এবারও সবজি উৎপাদনে রেকর্ড গড়বেন আমার ওয়ার্ডের কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন বলেন, অতি বৃষ্টির ধকল না থাকাসহ আবহাওয়া অনুকূলে ছিল বেশ। তাই শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার দেড় মাস আগে থেকেই কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয় শীতকালীন আগাম সবজি চাষে। এতে পৌরসভাসহ মাতামুহুরী তীরের অন্তত ১০টি ইউনিয়নের কৃষকেরা সবজি চাষে মাঠে নামেন। ইতোমধ্যে নদীতীরের কোনো কোনো ক্ষেত থেকে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ সবজি বিক্রি করে আর্থিকভাবে তারা লাভবান হচ্ছেন। পাশাপাশি সাধারণ মানুষও নতুন উৎপাদিন শীতকালীন সবজি নাগালের মধ্যে কিনতে পারছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, বরাবরের মতোই মাতামুহুরী নদীর মিঠাপানি ব্যবহার করে এবারও সবজি উৎপাদনে রেকর্ড গড়বেন এখানকার কৃষকেরা। এজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় প্রণোদনা সহায়তাও দেওয়া হয় তাদের।