টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
কক্সবাজারের টেকনাফে অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়া দক্ষিণ হ্নীলা (নীলা) বড় বৌদ্ধ বিহার পরিদর্শন করেছেন ঢাকা প্রতিনিধি দল।
১৪ নভেম্বর সকাল ১১ টায় ২শ বছরের পুরনো টেকনাফের দক্ষিণ হ্নীলা বড় বৌদ্ধ বিহার পরিদর্শন করেন “সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের” নির্বাহী সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা।
পরিদর্শন শেষে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসনের সাথে দেখা করে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ সুপারকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের সুপারিশ করবে প্রতিনিধি দল।
রাখাইনদের অভিযোগ, ২০০৯ সাল থেকে প্রশাসনের চোখের সামনেই টেকনাফ ও উখিয়ার সবচেয়ে বড় এই বৌদ্ধবিহার দখল শুরু করে প্রয়াত সাবেক এমপি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী। তাঁর মৃত্যুর পর ছেলেরা একাধিকবার হামলার মাধ্যমে ১০ একর ভূমিসহ পুরো বৌদ্ধ বিহারটি দখলে নেয়। তখন বৌদ্ধবিহারের দরজা-জানালা, আসবাবপত্র, কাঠের সিঁড়ি ও অবকাঠামো খুলে নিয়ে যান। সেসময় মন্দিরের ২০টি প্রাচীন বুদ্ধমূর্তির মধ্যে ১৯টিই চুরি হয়ে যায় বলেও অভিযোগ তাদের।
বিহার কর্তৃপক্ষের দাবি বিহার এলাকার বড় বড় গাছও কেটে ফেলা হয়েছে। তবে ২০০ বছর পুরনো এই বৌদ্ধ বিহারটি পুনরুদ্ধারে নির্দেশনা আসলেও এখনো কোন বাস্তাবায়ন হয়নি। বরং তাদের সাথে দখলে যোগ হয়ে আশপাশের আরও কিছু প্রভাবশালী লোকজন। এখন বৌদ্ধ বিহারটি প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে।
পরিদর্শন শেষে “সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের” নির্বাহী সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গিণযোগাযোগ ও সাংবাদিককতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘আমি ১৬ বছর আগে যখন হ্নীলা বৌদ্ধ বিহার এসেছিলাম তখন এ বৌদ্ধ বিহারে বিশাল গর্জন গাছের পুরানো পিলার দাঁড়িয়েছিল। বৌদ্ধদের যেই প্রিয় ছোট বড় মুর্তি সে গুলো কিন্তু আমারা দেখেছি। এ হ্নীলা বৌদ্ধ বিহার নিয়ে আমরা লেগে আছি এবং অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আমরা যখন প্রথম বৌদ্ধ বিহারে এসেছিলাম তখন সাবেক এমপি মুহাম্মদ আলীর ছেলেরা আমরা থাকা অবস্থায় গ্রেনেড হামলা করে আমাদের উপর আতঙ্ক সৃষ্টি করছিল। আমাদের কথা হচ্ছে, এ অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্য মুছে ফেলার জায়গা তৈরি করতেছে এটা কোনভাবেই হতে দেওয়া যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘‘হ্নীলা’ বানানের নামের মধ্যেই আছে হ্নীলা বৌদ্ধ বিহার কার। আমাদের দাবি হচ্ছে, গেল যে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার বিদেশে সীমাহীন টাকা পাচার করেছে। বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ মানুষের জমি -জমা দখল করেছে। কোন সম্পত্তি মানুষ রেহাই পায়নি। তার কেটি নমুনা হ্নীলা বৌদ্ধ বিহার। এ বিহারে এখন কোন চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় না। এ বৌদ্ধ বিহারের মুর্তি গুলোর হাত ভেঙে দিয়েছ দুর্বৃত্তরা। আমরা মুসলিম হিসেবে যদি আমাদের মসজিদের উপর আঘাত লাগে তখন আমাদের যেমন কষ্ট লাগে ঠিকই তেমন অন্য ধর্মের মানুষের ও কষ্ট লাগে। তাদের সংবেদনশীলতাকে সম্মান করতে হবে। বাংলাদেশ কেবল বাঙালির না, মুসলিমের ও না। বাংলাদেশে ৫০ টির উপরে জাতি বসবাস করে কেবল মুসলমান না। বহু জাতির বহু ধর্মের বিভিন্ন ভাষার যে সংস্কৃতি পূর্ণ রাষ্ট্র আমরা তৈরি করেছি। আমরা চাই এ হ্নীলার প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার দখলমুক্ত হোক।