নিজস্ব প্রতিবেদক:
সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রামে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের হিসেবে রোববার (১ জুন) ভোর ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৯ মিলিমিটার। এতে করে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় ফের জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের সড়কগুলোর কোথাও হাঁটু সমান আবার কোথাও কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। একারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া লোকজন।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার বেলা ১২টা থেকে রোববার বেলা ১২ পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৯ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া রোববার ভোর ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১৯ মিলিমিটার এবং রোববার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টায় ১৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলেন, সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকবে।
জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রামে গত বুধবার থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। এরপর কখনো হালকা, কখনো মাঝারি আবার কখনো ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হচ্ছে। চট্টগ্রামে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হলেও নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কিন্তু এবারের বৃষ্টিপাতে শুক্রবার পর্যন্ত সড়কে তেমন পানি দেখা যায়নি। কিন্তু শনিবার নগরের কয়েকটি সড়কে ফের পানি দেখা যায় এবং রোববার এসে পানির পরিমাণ বেড়ে যায়।
রোববার খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরের চকবাজার, কাতালগঞ্জ, জিইসি, আগ্রাবাদ ও আকবরশাহ থানার ইস্পাহানি এলাকায় বিভিন্ন সড়কে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমেছে।
বেসরকারি চাকরিজীবী মো. শামীম হোসেন বলেন, সকাল ৮টার দিকে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হই। হাঁটতে হাঁটতে কোমর সমান পানির ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। প্যান্ট পুরো ভিজে গেছে। এমন অবস্থায় অফিসে গিয়ে বসে থাকা খুব কষ্টকর হবে। শুধু আমি না, রাস্তায় শত শত মানুষকে দেখি পানির মধ্যে হেঁটে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে মনে হয় বৃষ্টি হলেই চট্টগ্রাম যেন অচল হয়ে পড়ে।
আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ রুবিনা আক্তার বলেন, সকালে ছেলেকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে বের হই। বের হয়েই দেখি রাস্তায় হাঁটু পানি। বাচ্চাকে কোলে নিয়ে পানি পার হওয়া খুবই ভয়ংকর পরিস্থিতি। অনেক জায়গায় ড্রেনের ঢাকনা খোলা, ভয় হয় পা পড়ে না যায় আবার। অনেক বছর ধরে এই সমস্যা। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার পানি না ওঠায় একটু আশাবাদী হয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তবে দেখি এখনো চূড়ান্ত সমাধান হলো না।
এর আগে গত শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন গিয়ে টানা বৃষ্টির পরও জলাবদ্ধতা না হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। ওইদিন তিনি নগরের রহমতগঞ্জ, জেএমসেন লেন, জিইসি মোড়, মুরাদপুর ও বহদ্দারহাটসহ জলাবদ্ধতাপ্রবণ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এসময় তিনি ভিডিও কলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেন।
উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, টানা বৃষ্টির পরও নগরে জলাবদ্ধতা না হওয়া একটি বড় সাফল্য। এর পেছনে চসিকসহ সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা রয়েছে। পরিকল্পিতভাবে কাজ চালিয়ে গেলে ভবিষ্যতেও নগরবাসী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত থাকতে পারবে। চলমান কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে বাকি কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।