তারেকুর রহমান :
নীল সমুদ্রের নোনাজল ছোঁয়া বাতাস, ঢেউয়ের ছন্দে গেয়ে ওঠা এক টুকরো নস্টালজিয়া! এমনই এক রঙিন দিনে টেকনাফ সমুদ্রসৈকতে জমে উঠেছিল এসএসসি ব্যাচ ২০১৪-এর টেকনাফ উপজেলার শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা। স্কুলজীবনের বন্ধুত্ব, স্মৃতি আর হাসি-কান্নার গল্পে একে একে জেগে উঠেছিল কৈশোরের দিনগুলি।
এই ব্যাচের একজন পুরোনো মুখ হয়ে আমিও ফিরে গিয়েছিলাম সেই নির্ভার কিশোর বেলায়। মেরিন ড্রাইভের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে শামলাপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে আমি, বেলাল, রিদুয়ান, সাদ্দাম, হোসাইন ও আলম রওনা দিলাম দেশের শেষ সীমান্ত টেকনাফের পথে। সাগরপাড়ে পৌঁছে দেখি, আগেই এসে গেছে অনেক চেনা-অচেনা মুখ। বছরের পর বছর যোগাযোগ না থাকা সত্ত্বেও যেন এক মুহূর্তেই মিলেমিশে গেলাম সবাই।

এখানে এসেছে- শামলাপুর উচ্চ বিদ্যালয়, টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়, সাবরাং উচ্চ বিদ্যালয়, শাহপরীরদ্বীপ হাজী বশির আহমদ উচ্চ বিদ্যালয়, নয়াপাড়া আলহাজ্ব নবী হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়, সেন্টমার্টিন উচ্চ বিদ্যালয়, লম্বরি মলকাবানু উচ্চ বিদ্যালয়, নয়াবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, হ্নীলা আল ফালাহ একাডেমির বন্ধুরা। কেউ চাকরিজীবী, কেউ শিক্ষক, কেউ উদ্যোক্তা। তবুও সবাই যেন এক জায়গায়, একই পোশাকে। ফিরে পেলাম স্কুল জীবনের সেই হাসিখুশি সময়।
সূর্যের আলো গা ছুঁয়ে যখন সমুদ্রের বুকে হেলে পড়ছিল, তখন সবাই একসঙ্গে বসে গল্প করছিলাম। চলেছিল- লোকগীতি, আঞ্চলিক গান, কবিতা, খেলাধুলা, র্যাফেল ড্র আর ক্রেস্ট প্রদান। কে কোথায় আছে; কে কী করছে; কেমন আছে পরিবার, এই গল্পে ভরে উঠেছিল চারপাশ। কেউ স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে হাসছিল, কেউ একটু চুপচাপ হয়ে পড়েছিল। কেউ আবার বউ-বাচ্চার গল্প করতে গিয়ে অবিবাহিতদের বিয়ের তাগিদ দিচ্ছিল। 

পরে মেরিন ড্রাইভের নরম ঘাসে বসে আনন্দের চড়ুইভাতি উদরপূরণ করলাম। খাওয়া-দাওয়া শেষে কেউ কেউ টেকনাফের রাজকীয় ঐতিহ্য ভুলে যায়নি! তারা মিষ্টি পান মুখে দিয়ে আঙ্গুলের ডগায় চুন নিয়ে গল্প আড্ডায় মেতে উঠলো।
বন্ধুত্বের বন্ধন আরও দৃঢ় করতে কেক কাটা, গান, আড্ডা আর দলীয় ফটোসেশনে জমে উঠেছিল অনুষ্ঠান। চারদিকে শুধু হাসি, আনন্দ আর স্মৃতির রঙে ভরে উঠেছিল সৈকতের বালুকাবেলা।
হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের বন্ধু কবি আজিজুর রহমান তার সুমধুর কণ্ঠে শুনালো এরূপ আঞ্চলিক কবিতার লাইন-
“বন্ধু’অলোর মিলন মেলাত আয় হতো খুশি লার,
ছোড়ো ছোড়ো ঢেউ তুলে আর ঝাউবনর বৈয়ার।
স্কুল’র স্মৃতি আবার বুকোত মাইজ্জে বান,
বন্ধু তোরে ন ভুলিউম যাইলেও পরাণ।”
বন্ধু আতা উল্লার কণ্ঠে শুনেছি প্রাণ জুড়ানো বেশ কয়েকটি গান। বন্ধু-বান্ধবীরা মুচকি হেসে বললো, “সময় কেমন পাল্টে গেছে! তবু এই বন্ধুত্বটা আগের মতোই রয়ে গেছে।” এসব কথা শুনে সবার চোখে এক ঝলক আবেগের ছোঁয়াও লাগে।
দিনশেষে সূর্য যখন দিগন্তে ডুবে যাচ্ছিল, আমরা একে অপরের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছিলাম। যে বন্ধুদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন হলো তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানালাম। প্রতিশ্রুতি হলো এটাই শেষ নয়, এই মিলনমেলা প্রতি বছর হবে, আরও বড় পরিসরে।
নীল আকাশ, সোনালি বালু আর ঢেউয়ের গর্জন যেন রবিবারে (৮ নভেম্বর) সাক্ষী ছিল ২০১৪ ব্যাচের টেকনাফ উপজেলার শিক্ষার্থীদের অবিচ্ছেদ্য বন্ধুত্বের। এদিন প্রথমবারের মতো শেষ হলো ‘সৈকতের বালুতটে স্মৃতির আঁচড়ে বন্ধুত্বের রঙিন দিন।’
লেখক:
সংবাদকর্মী ও শিক্ষার্থী, এসএসসি ব্যাচ ২০১৪।












