“নিষ্পাপ শিশুর আর্তনাদ: জাগো মানবতা, জাগো রাষ্ট্র!”

মতামত

উখিয়া-টেকনাফের পাহাড় থেকে উঠে আসা এই নির্মম সত্য যেন আমাদের মানবতার কাছে চরম এক প্রশ্ন। ছবিটি দেখলে এক মুহূর্তের জন্য হৃদয় হিম হয়ে যায়। এই শিশুটির মুখে কোনো অপরাধের ছাপ নেই, নেই কোনো বিদ্বেষ। সে কি কখনো ভেবেছিল, এমন ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হবে, শুধুমাত্র এই কারণে যে, সে এই ভূখণ্ডে জন্মেছে?

এই শিশুটিকে অপহরণ করে মাটিতে অর্ধেক পুঁতে রাখা কেবল শারীরিক নির্যাতন নয়, এটি তার পুরো অস্তিত্বকে নিঃশেষ করার এক নির্মম প্রচেষ্টা। তার নিষ্পাপ চোখগুলো ভয়, আতঙ্ক এবং অপমানের নীরব সাক্ষী হয়ে রইল। এই ঘটনার ফলে তার কোমল মানসিকতায় যে গভীর ক্ষত তৈরি হলো, তা কি কখনো মুছে ফেলা যাবে?

রাষ্ট্র ও সমাজের ব্যর্থতা

ছেলেটিকে মুক্ত করতে পরিবারের দেড় লক্ষ টাকা দিতে হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এ টাকার ভার কী শুধুই পরিবারের ওপর বর্তাবে? এই শিশুর নিরাপত্তা কি রাষ্ট্রের দায়িত্ব নয়? একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা রাষ্ট্রের অঙ্গীকার। তবে কেন আজ এমন নিষ্ঠুর পরিস্থিতি?

এই ঘটনা শুধু একটি পরিবারকে নয়, আমাদের সমাজের বিবেককেও নাড়া দিয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, আমরা একটি ব্যবস্থার মধ্যে বাস করছি, যেখানে নিষ্পাপ শিশুর জীবন অর্থে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনের ব্যর্থতা, আইনশৃঙ্খলার শিথিলতা, এবং অপরাধীদের দাপট—সবকিছুই এই ঘটনার নেপথ্যে কাজ করেছে।

আমাদের করণীয়

১. অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: যারা এই নির্মম অত্যাচার চালিয়েছে, তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
২. প্রশাসনের দায়বদ্ধতা: স্থানীয় প্রশাসনকে আরও কার্যকর করতে হবে এবং এই ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে তাদের ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে।
3. মানসিক পুনর্বাসন: এই শিশুটির এবং তার পরিবারের জন্য মানসিক সাপোর্ট ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি।
৪. সমাজের দায়িত্ব: আমাদের প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে এবং অপরাধের বিরুদ্ধে একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে। প্রতিবেশী, পরিবার, সমাজ—সবার ভূমিকা অপরিহার্য।

মানবতার জাগরণ

আমরা কি এতটাই অসহায় যে, নিষ্পাপ শিশুর জীবন রক্ষার জন্যও টাকা গুনতে হবে? এই ঘটনা আমাদের বিবেককে জাগাতে হবে। আমাদের ভেতরে যে মানবতা লুকিয়ে আছে, তাকে জাগিয়ে তুলতে হবে।

এই শিশুটি আমাদের প্রশ্ন করছে:
“আমার কি অপরাধ ছিল? আমাকে কেন এমন শাস্তি দেওয়া হলো? আমার নিরাপত্তা কোথায়?”

প্রত্যেকের উচিত এই প্রশ্নের জবাব খোঁজা এবং দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে নিজের ভূমিকা পালন করা। শিশুদের ভবিষ্যৎ রক্ষায় আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ, একটি শিশুর কান্না সমগ্র জাতির ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি।

লেখকঃ শাহ্‌ মুহাম্মদ রুবেল
নির্বাহী সম্পাদক
দরিয়া নগর ডটকম