১১৭৪ যাত্রী নিয়ে মৌসুমের প্রথম সেন্টমার্টিন যাত্রা করল তিন জাহাজ

টেকনাফ

তারেকুর রহমান, কক্সবাজার ||

১ হাজার ১৭৪ জন যাত্রী নিয়ে মৌসুমের প্রথম সেন্টমার্টিন যাত্রা করেছে তিনটি পর্যটকবাহী জাহাজ—এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বারো আউলিয়া ও কেয়ারি সিন্দাবাদ।

সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জেটিঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে জাহাজগুলো রওনা দেয়।

শুরুতেই পর্যটকদের কিউআর কোড যাচাই, নিরাপত্তা ব্রিফিং এবং স্বাগত জানান জেলা প্রশাসন, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞার পর আজ থেকে দুই মাসের জন্য সীমিত পরিসরে সেন্টমার্টিনে রাতযাপনের সুযোগ চালু হয়েছে। শর্ত হিসেবে প্রতিদিন দুই হাজার পর্যটকের বেশি দ্বীপে যেতে পারবেন না এবং সরকার ঘোষিত ১২ নির্দেশনা কঠোরভাবে মানতে হবে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুসারে ট্রাভেল পাস ও রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কেউ সেন্ট মার্টিন যেতে পারবে না। প্রতিদিন দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবে। পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিক, ওয়ান-টাইম বোতল, মোটরচালিত যান, উচ্চ শব্দ, রাতের আলোর ব্যাপারে অবশ্যই সচেতনতা থাকতে হবে। নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসন মাঠে থাকবে।’

গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বীপে পর্যটক প্রবেশ বন্ধ ছিল। এরপর থেকে নিয়ন্ত্রিত পর্যটনব্যবস্থা চালু থাকলেও রাতযাপনের অনুমতি না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এবার দুই মাসের পূর্ণ প্রস্তুতিতে জাহাজ পরিচালনা করবে মালিকপক্ষ। সি ক্রুজ অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, ‘রাত্রিযাপনসহ আজ থেকে দুই মাসের জন্য মুক্ত করা হয়েছে প্রবল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। আজ ১ ডিসেম্বর ১৭৪ জন যাত্রী নিয়ে তিনটি জাহাজ সেন্ট মার্টিনের এর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। গত বছর ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে এক লাখের বেশি পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণ করেছিলেন। এবার আরও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনায় জাহাজ চলবে এবং নিয়মানুসারে পর্যটকরা নির্বিঘ্নে সেন্ট মার্টিন ঘুরে বেড়াতে পারবে।’

ঢাকার বনশ্রী থেকে আসা দম্পতি আহসান রিয়াদ ইসলাম ও নাহার তাসনীম মৌসুমের প্রথম সেন্ট মার্টিন যাচ্ছেন। কথা হয় তাদের সাথে। রিয়াদ বলেন, ‘দীর্ঘ সময় পর রাতে থাকার অনুমতি পেয়ে আমরা দারুণ খুশি। কিউ আর কোড স্ক্যান থেকে শুরু করে নিরাপত্তা–সবকিছুই আজ খুব সুশৃঙ্খল মনে হয়েছে। সেন্ট মার্টিন সবসময়ই আমাদের কাছে স্বপ্নের জায়গা।’

নাহার বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষার কড়াকড়ি দেখে ভালো লাগছে। সবাই যদি নিয়ম মানে—দ্বীপটা আরও সুন্দর থাকবে।’

রাজবাড়ীর শওকত দস্তগীর বলেন, ‘প্রথমবারের মতো সেন্ট মার্টিন যাওয়া হচ্ছে। তাই আগে থেকেই রেজিস্ট্রেশন করেছি‌। আজকের যাত্রায় নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা দুটোই প্রশংসার যোগ্য। প্রথমদিনের আয়োজন দেখে আমাদের আস্থা বেড়েছে। প্রতিদিন যেন এই নিয়ম অব্যাহত রাখা হয়।’

মাহমুদা জারা নামের আরেক পর্যটক বলেন, ‘টিকিটের কিউআর কোড যাচাই, লাগেজ চেক—সবকিছুই খুব পেশাদারভাবে হয়েছে। আমরা খুব উৎসাহ নিয়ে যাচ্ছি।’

এদিকে দীর্ঘ অপেক্ষার পর পর্যটক বরণে প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছেন সেন্ট মার্টিনের পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সেন্টমার্টিন মারমেইড রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী তৈয়ব উল্লাহ বলেন, ‘দীর্ঘ ১০ মাস পর পর্যটকরা আমাদের সেন্ট মার্টিন রওনা দিয়েছে। তাদেরকে বরণে আমরা প্রস্তুত রয়েছে এখানে। সারাদেশ থেকে পর্যটকরা আসলে আমাদের আরো বেশি ভালো লাগবে।’

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, শুধু দুই মাস নয়, অন্তত চার মাস রাতযাপন চালু থাকলে আগ্রহ নিয়ে থাকা অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন আসতে পারবে। ফলে অর্থনীতি আরও দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে।’

সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় দ্বীপ ভ্রমণে ১২টি নির্দেশনা জারি করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

বিআইডব্লিউটিএ এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান চলাচল করা যাবে না। ট্যুরিস্টদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টাল থেকে অনলাইনে টিকিট কিউআর কোডসহ সংগ্রহ করতে হবে। সৈকতে রাতে আলো জ্বালানো, উচ্চ শব্দ বা বারবিকিউ- সবই নিষিদ্ধ। কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ, প্রবাল, কাছিম, পাখি, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা যাবে না। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ মোটরচালিত যেকোনো যান চলাচল নিষিদ্ধ। পলিথিন এবং ওয়ান টাইম প্লাস্টিক নেওয়া যাবে না। ৫০০ ও ১ হাজার মিলিলিটারের প্লাস্টিক বোতল বহন করা যাবে না।