সমুদ্রশহরে দেড় হাজার দৌড়বিদের ম্যারাথন

কক্সবাজার

তারেকুর রহমান, কক্সবাজার ||

কক্সবাজারে ভোরের নিস্তব্ধতা ভেঙে দৌড়াতে শুরু করে দেড় হাজার উদ্যমী দৌড়বিদ। কেউ ফিটনেসের তাগিদে, কেউ আবার আহ্লাদ থেকে সূর্যের প্রথম আলো গায়ে মেখে অংশ নেন ম্যারাথনে।

উৎসবমুখর এই পরিবেশে পর্যটনশহরে ‘তৃতীয় কক্সবাজার ম্যারাথন ২০২৫’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিপাদ্য ছিল- ‘এভরি স্টেপ ফর ওয়েলনেস অ্যান্ড দ্য ওশান।’

শনিবার (১ নভেম্বর) ভোর ৫টার দিকে কক্সবাজার রানার্স কমিউনিটির উদ্যোগে এবং কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় দৌড় প্রতিযোগিতার উদ্বোধন হয়। চারটি বিভাগে অনুষ্ঠিত এই দৌড়ে অংশ নেন দেশজুড়ে আসা পেশাদার ও অপেশাদার দৌড়বিদরা।

এখানে ছিল ৪২.২ কিমি (ফুল ম্যারাথন), ২১.১ কিমি (হাফ ম্যারাথন), ১০ কিমি (মিড রান) এবং ২.৫ কিমি (কিডস রান)।

সমুদ্রসৈকতের লাবণি বিচ পয়েন্ট থেকে দৌড়ের সূচনা হয়। এরপর হলিডে মোড়, থানা রোড, খুরুশকুল, চৌফলদন্ডি, পোকখালী, ইসলামপুরের খান বিচ অতিক্রম করে পুনরায় লাবণি বিচেই শেষ হয় ম্যারাথনের এই রোমাঞ্চকর পথযাত্রা।

ফুল ম্যারাথন পুরুষ বিভাগে প্রথম হয়েছেন রহিম উদ্দিন। তিনি বলেন, “এই পরিবেশে দৌড়ানো ছিল জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা। এমন আয়োজন মন ও শরীর দুটোই সতেজ করে।”

হাফ ম্যারাথনে প্রথম হওয়া আফরোজা আক্তার রিক্তা বলেন, “আমরা চাই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে সমান সুযোগ দেয়া হোক। দৌড়, খেলা বা যে কোনো কর্মকাণ্ডে নারী-পুরুষ সমতা নিশ্চিত করলে সমাজ আরও শক্তিশালী ও সুস্থ হয়।”

এ প্রতিযোগিতায় মিড রান পুরুষ বিভাগে জাকির হোসেন, নারী বিভাগে বিপাশা বিজয়ী হয়েছেন। কিডস রান ছেলেদের মধ্যে প্রথম সাফিন ওমায়ির, মেয়েদের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছে ওয়াসিনা বিনতে আমিদ।

ম্যারাথনের রেস ডিরেক্টর ও আয়োজক কমিটির সদস্য এসএম সাদেক বলেন, “বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও আমরা সফলভাবে আয়োজনটি সম্পন্ন করেছি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে ফিটনেস, ওয়েলনেস এবং দৌড়ের প্রতি আগ্রহী করে তোলা। কক্সবাজারের তরুণদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করা এবং কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরা আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”

লাবণী উন্মুক্ত মঞ্চে আয়োজিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান। তিনি বলেন, “কক্সবাজার ম্যারাথন শুধু একটি দৌড় নয়, এটি অধ্যবসায়, শৃঙ্খলা ও উদ্যমের প্রতীক। এই আয়োজন তরুণ সমাজকে অনুপ্রাণিত করবে এবং কক্সবাজারকে আরও এগিয়ে নেবে।”

সভাপতির বক্তব্যে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সামশুদ্দৌজা নয়ন বলেন, “এই আয়োজন তরুণদের নিজস্ব উদ্যোগে সম্পন্ন হওয়াটা গর্বের বিষয়। এটি শুধু ক্রীড়া নয়, কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের বিকাশেও বড় ভূমিকা রাখবে।”

এসময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহিদুল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইমরান হোসাইন সজিব, নারী ফুটবলার শাহেদা আক্তার রিপাসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন‌‌।