রামুর বাঁকখালী নদীতে ‘জাহাজ ভাসানো উৎসবে’ সম্প্রীতির মিলনমেলা 

রামু

# দেশের উন্নয়নের জন্য সম্প্রীতি অপরিহার্য: ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন

কক্সবাজার প্রতিনিধি

ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, “কোন দুষ্টচক্র যাতে আমাদের ভালোবাসা, সহিষ্ণুতা ও সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে—সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের ঐতিহ্যকে আমরা লালন করি, ভবিষ্যতেও করব। সবাই মিলে এ দেশকে শান্তির নিবাস হিসেবে গড়ে তুলি।”

তিনি আরও বলেন, “সম্প্রীতিতেই শান্তি। যে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নেই, সে দেশের উন্নয়ন হয় না, স্থিতিশীলতাও আসে না। দেশের উন্নয়ন, পর্যটন ও উৎপাদনের জন্য সম্প্রীতি অপরিহার্য।”

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৫টায় রামুর বাঁকখালী নদীতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কল্পজাহাজ ভাসানো উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ড. খালিদ হোসেন।

দিনব্যাপী এ উৎসবে নদীর দুইপাড়ের সব ধর্মের মানুষ আনন্দে মেতে ওঠে। বাঁশ, কাঠ, বেত ও রঙিন কাগজে তৈরি চমৎকার কারুকাজে সাজানো সাতটি কল্পজাহাজ ভাসানো হয় নদীতে। গান-বাজনা, কীর্তন ও ফানুস ওড়ানোর মধ্য দিয়ে উৎসবটি পরিণত হয় সম্প্রীতির মহামিলনে।

‘সম্প্রীতির জাহাজে, ফানুসের আলোয় দূর হোক সাম্প্রদায়িক অন্ধকার’—এই স্লোগানে আয়োজিত উৎসবে অংশ নেয় রামুর বিভিন্ন ইউনিয়নের সাতটি বৌদ্ধ গ্রাম।

রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও কল্প জাহাজ ভাসা উৎসব উদ্যাপন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক উচ্ছাস বড়ুয়া জানান, ফতেখাঁরকুল ও রাজারকুল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের সাতটি কল্পজাহাজ অংশ নেয় এবারের উৎসবে।

কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, “প্রায় দুই শত বছর আগে মিয়ানমারের মুরহন ঘা এলাকায় মংরাজ ম্রাজংব্রান প্রথম এ উৎসবের সূচনা করেন। পরবর্তীতে রামুর রাখাইন ও মঘ সম্প্রদায় এ উৎসব পালন শুরু করে। এখন বড়ুয়া বৌদ্ধরা তা ধরে রেখেছেন।”

তিনি আরও জানান, বুদ্ধের সময় বৈশালী রাজ্যে মহামারী দেখা দিলে বুদ্ধ নিজে নৌকায় গঙ্গা নদী পাড়ি দিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন এবং দুর্যোগ দূর করেছিলেন। সেই স্মৃতিকে ধারণ করেই প্রতি বছর প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে বৌদ্ধরা কল্পজাহাজ ভাসানোর আয়োজন করে থাকে।

উৎসবে আগত কলেজছাত্রী প্রেরণা বড়ুয়া স্বস্তি বলেন, “এটি আমাদের প্রাণের উৎসব। এটি শুধু বৌদ্ধদের নয়—এখন এটি অসাম্প্রদায়িক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।”

রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও কল্প জাহাজ ভাসা উৎসব উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক ও অনুষ্ঠানের সভাপতি মিথুন বড়ুয়া বোথাম বলেন, “প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধদের আত্মশুদ্ধির উৎসব। এর পরদিন বাঁকখালী নদীতে জাহাজ ভাসানো উৎসব উদযাপন করি, যেখানে সব ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির বন্ধনে অংশ নেয়।”

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়া, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মান্নান, পুলিশ সুপার মো. সাইফউদ্দীন শাহিন, সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল, এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ফোরামের আহ্বায়ক সাথি উদয় কুসুম বড়ুয়া।