বৃষ্টিতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত; কক্সবাজারসহ তিন জেলায় ৬ মৃত্যু নিখোঁজ শতাধিক

কক্সবাজার

দরিয়া নগর ডেস্ক

দু’দিন ধরে ভারী বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলার নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। যেসব এলাকা আগে থেকেই বন্যাদুর্গত, সেসব এলাকার আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফেরা মানুষ আবারও দুর্ভোগে পড়েছেন। তাদের অনেকে এরই মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে শুরু করেছেন। যেসব সড়ক ও বাড়িঘর থেকে পানি সরে গিয়েছিল, সেগুলোর বেশির ভাগই ডুবে গেছে। উজানে ভারী বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বিভাগে নদীর পানি দ্রুত বাড়তে পারে। রাজধানীতেও গতকাল দিনভর বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন।

কক্সবাজারসহ তিন জেলায় ছয় মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে, নিখোঁজ শতাধিক। কক্সবাজারে পানিবন্দি দুই শতাধিক গ্রাম। ভারী বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বিভাগসহ উপকূলীয় এলাকায় বন্যার অবনতির ঝুঁকি রয়েছে জানিয়ে ওই সব এলাকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করেছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এদিকে বন্ধ হয়ে গেছে লঞ্চ চলাচল।
২০ আগস্ট দেশের উজানের পাহাড়ি ঢল ও অতি ভারী বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। দ্রুত তলিয়ে যায় ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ এলাকা। তবে ধীরে ধীরে অনেক স্থানে পানি নেমে গিয়েছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ গভীর স্থল নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পর এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি ঝরছে। এ অবস্থায় সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর ও নৌবন্দরগুলোকে ২ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আজ রোববার থেকে বৃষ্টি কমে আসতে পারে। তবে আগামী অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কক্সবাজারে উখিয়া উপজেলার ইনানী সৈকতে গতকাল ভেসে এসেছে দুই জেলের মৃতদেহ। তাদের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তিনি হলেন চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের আব্দুল করিম (৩৫)। এ ছাড়া কক্সবাজার সৈকতের সমিতিপাড়া পয়েন্ট থেকে একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গত শুক্রবার সাগরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কবলে পড়ে ইনানী সৈকতের কাছে এসে একটি ট্রলার ডুবে যায়। ট্রলারটিতে ১১ জন জেলে ছিলেন। ৯ জন জীবিত উদ্ধার হলেও দু’জন নিখোঁজ ছিলেন। এর আগে শুক্রবার বিকেলে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কলাতলী পয়েন্ট এবং রামু উপজেলার পেঁচারদ্বীপ পয়েন্টে ভেসে আসা দুই জেলের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া আটটি ট্রলার ও অন্তত ৭০ জেলে নিখোঁজ বলে জানিয়েছেন ট্রলার মালিকরা এদিকে কক্সবাজারে বৃষ্টি কিছুটা কমে যাওয়ায় শহর থেকে পানি নেমে গেলেও বেড়েছে প্লাবিত এলাকা। কক্সবাজারের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান বলেন, শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা কক্সবাজারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টি। এর আগে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে ৪৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছিল। শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২১০ মিলিমিটার।

কক্সবাজার উপকূলে ভারী বৃষ্টির পেছনে ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাব রয়েছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহিনুল ইসলাম জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াগি সপ্তাহখানেক আগে ভারত মহাসাগরে সৃষ্টি হয়। তা আঘাত হানে ভিয়েতনাম, চীন ও মিয়ানমারে। তিন দেশে তাণ্ডব চালিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি আবার সাগরে নামে। তার পর তা প্রচুর মেঘ নিয়ে লঘুচাপ আকারে কক্সবাজার উপকূল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর প্রভাবেই দেশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের দূরবর্তী প্রভাব, শক্তিশালী মৌসুমি বায়ু ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া মেঘমালা মিলেমিশে কক্সবাজারে রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে।