বিএনপিকে থামানোর চেষ্টা করবেন না ॥ আমীর খসরু

রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপিকে থামানোর চেষ্টা করবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, তিনি বলেন বিএনপিকে যখনই যারা থামাতে গিয়েছে তারাই ধ্বংস হয়েছে। শনিবার বিকেলে ষোলশহরের বিপ্লব উদ্যানে যুবদলের উদ্যোগে সমাবেশ ও যুব পথযাত্রা কর্মসূচিতে এ সব কথা বলেন তিনি।

আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মাধ্যমে জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের সরকার, তাদের সংসদ দেখতে চায়। এটা বাধাগ্রস্ত করার কোনো সুযোগ নাই। বিএনপি এর জন্য বিগত দিনে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। প্রয়োজনে আবারও ত্যাগ করতে রাজি আছি। গণতন্ত্রকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। বাংলাদেশের আগামী দিনের রাজনীতি কি হবে সে সিদ্ধান্ত দেবে জনগণ। সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে ঐক্যমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ দফা বাস্তবায়ন করা হবে।

তিনি বলেন, বিএনপি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দল এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য অনেকে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু পারেনি। গত ১৫ বছরে আমাদের নেতাকর্মীরা বাড়িঘরে থাকতে পারে নাই। নেতাকর্মীরা চাকরি হারিয়েছি। আমাদের নেতাকর্মীরা জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে। বছরের পর বছর মিথ্যা মামলায় জেলখানায় ছিল।

আমীর খসরু আরো বলেন, বিএনপি আজ অনেক বেশি শক্তিশালী। আমাদের কেউ থামাতে পারবে না। বিএনপিকে যখনই যারা থামাতে গিয়েছে তারাই ধ্বংস হয়েছে। বিএনপিকে থামানোর চেষ্টা করবেন না।

বাংলাদেশের আগামী দিনের রাজনীতি কি হবে সে সিদ্ধান্ত দেবে জনগণ। এ সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য অনেকে চেষ্টা করেছে। জনগণের সিদ্ধান্ত অনেকে অনেকবার দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবও চেষ্টা করেছিলেন, তিনি কি সফল হয়েছেন? এরপর এরশাদ চেষ্টা করে পারে নাই। শেখ হাসিনা চেয়েছিল সেও পারে নাই। তাই সেদিকে না গিয়ে বাংলাদেশের জনগণের সিদ্ধান্ত তাদের দিতে দেন।

আমীর খসরু বলেন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছি, সবাই মিলে দেশ গড়ি। তারেক রহমান সাহেব কেন জাতীয় সরকারের ঘোষণা দিয়েছিলেন নির্বাচনের পরে? বিএনপি যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ পেয়েও থাকে তারপরও জাতীয় সরকার করব। বাংলাদেশের মানুষের ঐক্যমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে, এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। আমরা কোন বিভক্তি চাচ্ছি না এবং সে জায়গা থেকে বিএনপি সরে দাঁড়াবে না। বিএনপি ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব জাতীয় সরকারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করবে। সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে ঐক্যমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ দফা বাস্তবায়ন করবে। ইতোমধ্যে যদি আগামী নির্বাচনের আগে কিছু সংস্কারের প্রয়োজন হয় তাহলে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সে সংস্কার হতে হবে। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া।

দেশের স্বাধীনতাই অনেকের অবদান রয়েছে জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমানের অবদান আছে এবং অনেকের অবদানও আছে। জাতির জনক বলতে যা বুঝায়, এগুলো কোনো এক ব্যক্তির কথা নয়, এগুলোর পেছনে নেতাদের ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, জীবন যুদ্ধে নামতে হয়েছে, অনেকে সম্মুখযুদ্ধে যুদ্ধ করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন। সবাইকে স্বীকৃত দিতে হবে। অনেকের অবদান আছে, যাদের অবদান আছে আজ পর্যন্ত সবাইকে স্বীকৃত দিয়ে স্মরণ করতে হবে। শুধু একজন ব্যক্তিকে নয়।

শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘সিম্বল’ হিসেবে ব্যবহার করে খারাপ কাজ করেছে মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ওই যে একজন ব্যক্তিকে সিম্বল হিসেবে ব্যবহার করে বাংলাদেশে যে গুম, খুন, হত্যা, মামলা, নির্যাতন নিপীড়ন, লুটপাট, এদেশের মানুষের মানবাধিকার, গণতন্ত্রের অধিকার, আইন শাসন কেড়ে নেওয়া, বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। ওই সেই ব্যক্তির নাম নিয়ে এবং সেই ব্যক্তির মূর্তি স্থাপন করেছে বাংলাদেশে। এই খারাপ কাজগুলো করেছে তারা। তাদের সাথে সাথে সেই ব্যক্তিও হঠাৎ করে চলে যায়। একটা সিম্বল ব্যবহার করে খারাপের পর খারাপ কাজ করতে থাকেন, এরপর আপনার যখন পতন হয় তখন ওই সিম্বলেরও পতন হয়। এটাই দুর্ভাগ্য।

বিপ্লব উদ্যানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিপ্লব উদ্যানে জিয়াউর রহমান পাকিস্তানিদের মুখের ওপর বলেছিল ‘আমি তোমাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করছি’। সে ঘোষণাতে পাকিস্তানের তৎকালীন অফিসারদের অনেককে জীবন দিতে হয়েছে, সে বিপ্লবের মাধ্যমে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন। তিনি বাঙালি সৈন্যদের নিয়ে বের হয়েছিলেন পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে, পরবর্তীতে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে গিয়ে প্রথম বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। একথাগুলো পরিষ্কারভাবে আমাদেরকে বুঝতে হবে বলতে হবে এবং জানাতে হবে নতুন প্রজন্মকে। এগুলো ভুলে গেলে চলবে না। স্বাধীনতার একথাগুলো অনেকে বলতে লজ্জা পায়, সাহসও করে না।

শনিবার বিকেলে সমাবেশ শেষে বিপ্লব উদ্যান থেকে কালুরঘাট অভিমুখী যুব পথযাত্রা কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।