টেকনাফে ফার্মার্স ফীল্ড ডে: প্রতিবন্ধী সরওয়ার কামালের অদম্য সাফল্যের গল্প

টেকনাফ

কক্সবাজার (টেকনাফ) প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নে ইপসার লাইভলিহুড কর্মসূচির আয়োজনে ফার্মার্স ফীল্ড ডে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ৩০ জুলাই (বুধবার) দুপুরে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। 

এই অনুষ্ঠানে জলবায়ু সহনশীল প্রযুক্তি ও উদ্যোক্তা উন্নয়নের উপর আলোচনার পাশাপাশি স্থানীয় এক প্রতিবন্ধী যুবক সরওয়ার কামালের অসাধারণ সাফল্যের গল্প তুলে ধরা হয়, যিনি সোলার ইনকিউবেটর ব্যবহার করে কোয়েল পাখির খামার গড়ে আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জন করেছেন।

সরওয়ার কামাল, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের একজন প্রতিবন্ধী যুবক। শারীরিক সীমাবদ্ধতা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। শুরুতে সাধারণ বিদ্যুৎচালিত ইনকিউবেটর দিয়ে কোয়েল পাখির বাচ্চা ফুটানোর কাজ শুরু করলেও উচ্চ বিদ্যুৎ বিলের কারণে তিনি সোলার ইনকিউবেটর ব্যবহারের দিকে ঝুঁকেন। ইপসার সহায়তায় একটি সোলার ইনকিউবেটর পেয়ে তিনি নিজ উদ্যোগে আরও একটি কিনে নেন। বর্তমানে তার খামারে ৩টি ইনকিউবেটর ও ৩০০-এর বেশি কোয়েল পাখি রয়েছে।

কোয়েল পাখি মাত্র ৪৫ দিনে ডিম দেয় এবং ৩০ দিনে বাজারজাত করার উপযোগী হয়। সরওয়ার কামাল এখন শুধু নিজেই সফল নন, বরং অন্য যুবকদেরও এই পেশায় উৎসাহিত করছেন। তিনি নতুন উদ্যোক্তাদের কোয়েল পাখি বিক্রি ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করছেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা পরিবেশবান্ধব ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রযুক্তির ব্যবহারের উপর জোর দেন। কারিগরি কর্মকর্তা নোবেল বড়ুয়া বলেন, “সোলার ইনকিউবেটর, মালচিং পদ্ধতি ও পলিনেট হাউসের মতো আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি খরচ কমায় এবং উৎপাদন বাড়ায়।”

লাইভস্টক অফিসার নুরুল আলম গবাদিপশুর টিকা ও ট্রে পদ্ধতিতে ঘাস চাষের কথা উল্লেখ করেন, যা স্থানীয় পর্যায়ে পশুখাদ্যের সংকট দূর করতে সাহায্য করছে।

প্রকল্প সমন্বয়কারী সেলিম উল্লাহ জানান, হোয়াইক্যং ইউনিয়নে ইপসা ৪৮৯ জন কৃষক ও উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সহায়তা দিচ্ছে। কোয়েল ফার্মিং, মাচায় সবজি চাষ ও সোলার প্রযুক্তির মতো উদ্ভাবনী পদ্ধতিগুলো কৃষকদের আয় বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

উপসহকারি প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নুরুল আলম, ইপসার মনিটরিং অফিসার নোবেল বড়ুয়া, টেকনিক্যাল অফিসার সেলিম উল্লাহ, ফীল্ড অফিসার সানুচিং মারমা, বেলাল উদ্দীন ও ইউনিয়ন ফ্যাসিলিটেটর জোবাইদা আক্তারসহ স্থানীয় কৃষক ও উদ্যোক্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন

সরওয়ার কামালের গল্প প্রমাণ করে যে প্রতিবন্ধকতা বা সংকটকে ইতিবাচক পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। তার মতো উদ্যোক্তারা টেকনাফের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছেন।

এই আয়োজনের মাধ্যমে সকলকে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও বিকল্প আয়ের উৎস খুঁজে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।