নাফনদী থেকে ট্রলারসহ ফের ১২ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি

কক্সবাজার টেকনাফ

কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারের টেকনাফের নাফনদী থেকে আবারও একটি মাছ ধরার ট্রলারসহ ১২ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নবাদি গোষ্ঠি আরাকান আর্মি।

শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুর দেড় টার দিকে বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ ধরে টেকনাফে ফেরার পথে শাহপরীরদ্বীপের নাইক্ষ্যংদিয়া সংলগ্ন নাফনদী থেকে তাদের ধরে নিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন, শাহপরীরদ্বীপ জেটিঘাট ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গফুর আলম।

ধরে নিয়ে যাওয়া ট্রলারটির নাম এফবি ওসমান। এর মালিক শাহপরীরদ্বীপের সুলতান আহমদের ছেলে মো. ওসমান।

সমিতির সভাপতি গফুর আলম জানান, আরাকান আর্মির সদস্যরা ধাওয়া দিয়ে অস্ত্রের মুখে জিন্মি করে ১২ জেলেকে ধরে নিয়ে যায়। বিষয়টি প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়েছে।

ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেরা হলেন, লাল মিয়ার ছেলে মো. আলি আহমদ (৩৯), মোহাম্মদ রশিদের ছেলে মোহাম্মদ আমিন (৩৪), মৃত আবদুল করিমের ছেলে ফজল করিম (৫২), আবদুল মজিদের ছেলে কেফায়েত উল্লাহ (৪০), শামসুল আলমের ছেলে সাইফুল ইসলাম (২৩), মৃত নুর বশরের ছেলে সাদ্দাম হোসেন (৪০), মুস্তাক আহমদের ছেলে মো. রাসেল (২৩), আব্দুর রহমানের ছেলে মো. সোয়াইব (২২), নুরু ইসলামের ছেলে আরিফ উল্লাহ (৩৫), ফরিদ আলমের ছেলে মোহাম্মদ মোস্তাক (৩৫), নুর আহমদের ছেলে নুরুল আমিন (৪৫) এবং মোহাম্মদ আমিনের ছেলে মো. আরফান (২৩)। তাদের সকলেই বাড়ি শাহপরীরদ্বীপের বিভিন্ন এলাকায়।

এ ব্যাপারে জানার জন্য কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশনের কমান্ডারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে অবহিত করা হয়নি। এব্যাপারে আরাকান আর্মির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।”

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, “জেলে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি শাহপরীর দ্বীপ কোস্টগার্ড ও স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে শুনেছি এবং সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।”

এর আগে গত ৫ আগস্ট সকালে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়া সংলগ্ন নাফনদীর জলসীমানা থেকে বিহিঙ্গি জাল ও নৌকাসহ দুইজনকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। তারা হলেন, টেকনাফ পৌরসভার দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার মো. তৈয়বের ছেলে উসমান গনি (৩২) ও মো হোসেনের ছেলে আব্দুল করিম (৪০)। এবং ১২ আগস্ট সকাল নয়টার দিকে বঙ্গোপসাগরের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে নৌকাসহ ৫ জেলেকে ধরে নিয়ে যায়‌।

তারা হলেন, টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহ পরীর দ্বীপের মো. আলী আহমদ ছেলে মো. ইলিয়াস(৪১), মো. ইলিয়াস ছেলে আক্কাল আলী (২০), মো. ইলিয়াস ছেলে মো. নুর হোসেন (১৮), কালু মিয়ার ছেলে সাবের হোসেন (২২) ও মোহাম্মদ নুর হোসেনের ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম (২৫)। তারা সকলেই সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।

এ নিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া দুই দফায় ৭ জেলে এবং তৃতীয় দফায় ১২ জেলেসহ এখন পর্যন্ত ১৯ জেলে আরাকান আর্মির হাতে জিন্মি রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এই পর্যন্ত নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে আরাকান আর্মি ২২৩ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে। এর মধ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় কয়েক দফায় ১৮৯ জন জেলে এবং ২৭টি ট্রলার-নৌকা ফেরত আনা হয়েছে।