দরিয়া নগর রিপোর্ট
টেকনাফে মানবপাচারকারীদের পাহাড়ি আস্তানা থেকে ২৬ রোহিঙ্গা ও ৫ বাংলাদেশি নাগরিককে উদ্ধার করেছে র্যাব। তাদের সবাইকে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশ্যে আস্তানায় জড়ো করেছিল দালাল চক্র।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে উপজেলার বাহারছড়া ইউপির কচ্ছপিয়া সংলগ্ন পাহাড়ের চূড়ায় মানবপাচার চক্রের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়। এসময় মানবপাচার চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো- টেকনাফের হ্নীলা ইউপির পানখালী এলাকার মৃত অছিউর রহমানের ছেলে মো. আনোয়ার (৪৪) এবং টেকনাফ সদর ইউপির উত্তর লম্বরী এলাকার মৃত মো. রফিকের ছেলে মো. আইয়ুব (৩৬)।
র্যাব জানায়, এখলাছ মিয়া নামে এক ভিকটিমের সহযোগিতায় সোমবার রাত আড়াইটার দিকে কচ্ছপিয়া এলাকার জনৈক নুর হোসেনের বাড়ির পিছনে পাহাড়ের চূড়ায় মানবপাচারকারীদের গোপন আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-১৫ সদস্যরা। ওই সময় মানব পাচারকারীদের হেফাজত থেকে ৩ পুরুষ, এক নারী ও এক শিশুসহ পাঁচ বাংলাদেশি এবং ২৬ জন রোহিঙ্গা নাগরিক (পুরুষ-২, নারী-২, শিশু-২২) সহ মোট ৩১ জন ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। এছাড়া পাচার চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
এর আগে, ১২ নভেম্বর বিকেলে মেরিন ড্রাইভের কচ্ছপিয়া পয়েন্টে ঘুরাঘুরির সময় উখিয়ার এখলাছ মিয়া ও তার সঙ্গীসহ ২-৩ জনকে জোরপূর্বক চোখ বেঁধে পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। একপর্যায়ে অপহৃতদের পরিবার থেকে ২ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে ব্যর্থ হয়ে গত ১৬ নভেম্বর রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশ্যে এখলাছসহ ১৫-২০ জনকে সাগরপাড়ে নিয়ে আসে। ওই সময় কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে আসে এখলাছ মিয়া। পরবর্তীতে তার সঙ্গীদের উদ্ধারে র্যাবের কাছে সহযোগিতা প্রত্যাশা করে সে।
উদ্ধার ভিকটিমদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র্যাব আরও জানায়, ভিকটিমদের মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে কচ্ছপিয়া পাহাড়ের চূড়ায় আস্তানায় আটকে রাখে মানব পাচারকারীরা। সেখানে থাকা অবস্থায় মিয়ানমারে আছে বলে ভিকটিমদের পরিবারের নিকট ফোন করে টাকা দাবী করা হতো। এভাবে অনেকের নিকট থেকে জনপ্রতি এক লক্ষ করে টাকা আদায় করে পাচারকারীরা। এছাড়া পাহাড়ী ওই আস্তানায় ভিকটিমদের শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি ঠিকমত খাবার দেওয়া হতো না।
গ্রেফতার পাচারকারীদের বরাতে র্যাব জানায়, পাচার চক্রের হোতাসহ ৫-৭ জন কৌশলে পাহাড়ের অপর পাশ দিয়ে পালিয়ে গেছে। মূলত ভিকটিমদের আর্থ-সামাজিক অনগ্রসরতা ও পরিবেশগত অসহায়ত্বকে পুঁজি করে মানবপাচারকারী চক্র উন্নত জীবন-যাপন, অধিক বেতনে চাকুরী ও অবিবাহিত নারীদেরকে বিবাহের মিথ্যা প্রলোভনের মাধ্যমে ছল-চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে যৌন নিপীড়ন, প্রতারণামূলক বিবাহ ও জবর-দস্তিমূলক শ্রমসেবা আদায় এর অভিপ্রায়ে পাহাড়ী আস্তানায় একত্রিত করে মালয়েশিয়া পাচারের জন্য জোরপূর্বক আটকে রাখা হয়।
গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে টেকনাফ মডেল থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে। উদ্ধার ভুক্তভোগীদের বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া শেষে বাড়িতে ও সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পে হস্তান্তর করা হবে।