দরিয়া নগর ডেস্ক:
চট্টগ্রামে ভাইরাস জ্বরের প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বেশিরভাগ রোগীর শরীরে ভাইরাস জ্বর। পাশাপাশি ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার রোগীও বাড়ছে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ৮৮৯ জন। মৃত্যু হয়েছে নয়জনের। সবশেষ গত রোববার বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম শিবুচরণ ভৌমিক (৭৪)। তিনি হাটহাজারীর বাসিন্দা।
এবং এখন পর্যন্ত চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৮৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ জন। চট্টগ্রামে সরকারিভাবে আরটিপিসি ল্যাব না থাকা ও চিকনগুনিয়া নির্ণয় করতে বেসরকারি হাসপাতালে বেশি টাকা হওয়ায় অনেক রোগী টেস্টের আওতায় আসছে না বলে মত চিকিৎসকদের।
চিকিৎসকরা জানান, চার ধরনের জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। এর মধ্যে চিকুনগুনিয়ার পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে উচ্চমাত্রার জ্বর, অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা, কখনো ফুলে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। অনেক সময় জ্বর সেরে গেলেও কয়েক সপ্তাহ বা মাসব্যাপী জয়েন্টের ব্যথা থেকে যাচ্ছে।
সরকারি জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগ থেকে গত দুই সপ্তাহে চিকুনগুনিয়া সন্দেহে পাঁচ শতাধিক রোগীকে রক্ত পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডা. এএসএম লুৎফুল কবির শিমুল বলেন, ‘চিকুনগুনিয়া প্রচন্ড কষ্টদায়ক। এবার জ্বরে আক্রান্তদের ডেঙ্গুর পাশাপাশি চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হচ্ছে বেশি।’
চিকনগুনিয়া থেকে রেহাই পেতে সচেতনতা দরকার বলে মত এই চিকিৎসকের। ঘুমানোর সময় মশারী টানানো ও জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ তার।
বেসরকারি এপিক হেলথকেয়ার সেন্টার থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, এ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গত তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ৫৭৬ জনের রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৪৩২ জনের শরীরে চিকুনগুনিয়া এবং বাকিদের মধ্যে সাধারণ ভাইরাস জ্বরের রোগী শনাক্ত হয়েছে।
বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে গত দুই সপ্তাহে জ্বরে আক্রান্ত ৫১২ জনের রক্ত পরীক্ষা করে ৩৪২ জনের শরীরে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছে। একইভাবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে জ্বরে আক্রান্ত ৭৫ জনের পরীক্ষা করে ৪৬ জনের চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরে মশার উৎপাত বেশি। এ কারণে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার বেশি। তবে মশা নিধনের দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের। কর্পোরেশনকে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। উপজেলা পর্যায়েও জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’