কুতুবদিয়া প্রতিনিধিঃ
নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতবিহীন আজম কলোনী গ্রামের মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার সকালে শত শত গ্রামবাসী উপস্থিত হয়ে বিদ্যুতের দাবীতে কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদ চত্বর মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে ইউএনও(ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বরাবরে লিখিত স্বারকলিপি প্রদান করেন। তিনি সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ইউএনও যোগদানের পর কি ভাবে আজম কলোনী গ্রামে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা করা যায় তা নিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করে সিন্ধান্ত নিবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
আজম কলোনী গ্রামের বিদ্যুৎ সমস্যা নিরসনের দাবীতে বৈষম্য বিরোধী মানববন্ধন অনুষ্ঠানে মেহেদী হাসান জিসানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বড়ঘোপ ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম, বড়ঘোপ ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক তানভীর মাহমুদ, বড়ঘোপ ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক কাইমুল বশরসহ আরো অনেকে।
এসময় উপজেলার বড়ঘোপ ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হলে ও আজম কলোনি গ্রামটি ১নং খাস খতিয়ানভ‚ক্ত থাকায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিদ্যুৎ লাইন ও বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারছে না।
গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, আজম কলোনী গ্রামে প্রায় ১০ হাজারের অধীক মানুষ বসবাস করে। ডাক্তার, সাংবাদিক,শিক্ষক,জনপ্রতিনিধি, সেনাবাহিনী,নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী,বিডিআর,পুলিশ, আনসার,ব্যবসায়ী,লবন চাষী,মৎস্যজীবিসহ সরকারি বে-সরকারিসহ সকল পেশার মানুষের বসবাস। গেল শতাব্দীর ৬০ দশকের দিকে অর্থাৎ ১৯৬০ সনে কক্সবাজারের উপক‚ল কুতুবদিয়া দ্বীপের উপর বয়ে যাওয়া ঘ‚র্ণিঝড়ে কয়েকটি গ্রাম বঙ্গোপসাগরে বিলীন হয়ে যায়। (তন্মধ্যে আজম কলোনীতে বসবাসরত লোকজন ছিল) তখনি বড়ঘোপ বাজারের পশ্চিমে বসবাসরত দুই গ্রামের শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি জোয়ারের স্রোতে ভেসে গেলে প্রায় ৫শ মানুষ গৃহহারা হয়ে পড়ে। সেই সময়কালের বড় ধরণের ঘ‚র্ণিঝড়। তখনি তথ্য প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল না বললে চলে, বার্তা মাধ্যম ছিল শুধু মাত্র টেলিগ্রাম। টেলিগ্রামের মাধ্যমে জানতে পেরে তৎসময়ের পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর আজম খান কুতুবদিয়া ঘ‚র্ণি দুর্গত মানুষদের দেখতে ছুটে আসেন। গৃহহারা ঘ‚র্ণি দুর্গত মানুষের আহাজারী দেখে গভর্ণর আজম খান তাদের পুনবাসনের জন্য কক্সবাজার মহকুমার প্রধানকে নির্দেশ দেন।
ঘর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরী করে বড়ঘোপ মৌজার আরএস ৫৫১৪ দাগের ৩০.২০একর সরকারি পরিত্যক্ত জায়গার উপর গৃহহীন পরিবারকে পুনবাসন করে। তখনই গভর্নর আজম খানের নামেই গ্রামটির নামকরণ করা হয় আজম কলোনী। ধুধু বালি আর লবণাক্ত মাটিতে কার্যকরি পরিশ্রম করে নিজেদের ঘরবাড়ি স্থাপন করে বসবাস শুরু করে গৃহহীন মানুষ। বর্তমানে এই গ্রামে ষষ্ঠ প্রজন্ম পর্যন্ত চোখে পড়ে। প্রথম এবং দ্বিতীয় প্রজন্ম অধিকাংশ মারা গেছেন। এ গ্রামের মানুষকে সরকারিভাবে পূনবাসন করায় সেই সময়ের সরকার তাদের দখলকৃত ভ‚মির খাজনা মওকুফ করে দেয়। যে যেই অবস্থানে থেকে শৃংখলভাবে বসবাস করে আসছে।
১৯৭১ সনে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সনে বাংলাদেশ ভ‚মি মন্ত্রনালয় জরীপ বা সার্ভে কাজ শুরু হলে এ গ্রামে যার যত জমি ভিটি দখলে আছে তা দাগ এবং পরিমাপ ট্রেস ম্যাপ অনুপাতে দাগ সৃষ্টি করে এবং স্ব-স্ব দাগের জমির এরিয়া,শ্রেণীবিন্যাস নির্ধারণ করে ১নং খাস খতিয়ানে লিপিবদ্ধ করে। এ গ্রামের মানুষ সেই সময় থেকে এ পর্যন্ত সকল নাগরিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করলেও বিগত ৫৫ বছর ধরে স্ব স্ব দখলীয় জমির মালিক হতে পারেনি। সরকারের নিকট এলাকার বাসিন্দারা অনেকবার জেলা প্রশাসক, সহকারি কমিশনার ভ‚মি বরাবরে বন্দোবস্তির আবেদন করে কোন প্রতিকার পাননি। এখন এ গ্রামের মানুষের নামে বসতভিটির খতিয়ান না থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছে না। কিন্তু এ গ্রামের মানুষের এনআইডি কার্ড হাল নাগাদ,জাতীয়, স্থানীয় নির্বাচনে ভোট প্রয়োগ করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে থাকেন এলাকার লোকজন। এছাড়াও হোল্ডিং ট্যাক্স, চৌকিদারী ট্যাক্স থেকে শুরু করে যাবতীয় সরকারি সকল ধরণের কর আদায় করে আসছে গ্রামের জনগণ। সরকারি বরাদ্দে রাস্তাঘাট উন্নয়ন হচ্ছে। এ গ্রামের মানুষের আর্থিক অনুদানে নান্দনিক সৌন্দর্য বর্ধন দুটি মসজিদ নির্মাণ করে। এ গ্রামে যুগ যুগ ধরে সুপেয় পানির ব্যবস্থা না থাকায় স¤প্রতি সিটি শহরের আদলে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে (ইএমসিআরপি) প্রকল্পের আয়তায় পাইপড ওয়াটার স্কীম সুপ্রেয় পানীয় জলের সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থাপনার কাজ চলমান বলে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফরহাদ মিয়া নিশ্চিত করেন।
এলাকাবাসী দ্রæত আজম কলোনী গ্রামে বিদ্যুত সংযোগ স্থাপন করার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবী জানান।