আবুল কাশেম; কক্সবাজার প্রতিনিধি :
কুতুবদিয়ার মাঠগুলো একসময় ছিলো ফুটবলের উন্মাদনায় ভরপুর। গ্রামের প্রতিটি আঙিনা মুখর থাকতো কিশোর-যুবকদের খেলা-ধুলায়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে খেলাধুলার সেই ধারা যেন হারিয়ে গিয়েছিলো। তরুণরা মাঠ ছেড়ে ঝুঁকছিলো মোবাইল গেমসে, আসক্তি বাড়ছিল সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে।
এই প্রেক্ষাপটে কুতুবদিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্যথোয়াইপ্রু মারমা নিয়েছেন এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ক্রীড়া সংগঠনের মাঝে ফুটবল বিতরণ করে তিনি যেনো তরুণ প্রজন্মকে মাঠে ফেরার আহ্বান জানালেন।
বুধবার উপজেলা বড়ঘোপ সমুদ্র সৈকতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিদ্যালয় ও স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠনের প্রতিনিধিদের হাতে ফুটবল তুলে দেন ইউএনও ক্যথোয়াইপ্রু মারমা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ সাদাত হোসেন, কৃষি কর্মকর্তা অসিম কুমার দাশ, কুতুবদিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আরমান হোসেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মুসলিম উদ্দিনসহ উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় গণ্যমান্যরা।
ফুটবল হাতে পেয়ে শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে জানায়, এখন তারা নতুন উদ্যমে মাঠে নামতে পারবে।
কৈয়ারবিল ইমাম একাডেমি দাখিল মাদরাসার ক্রীড়া শিক্ষক মাস্টার নুর মোহাম্মদ জানান, মাঠে খেলাধুলায় শিশুরা যত বেশি যুক্ত হবে, তত কম যুক্ত হবে নেশা বা মোবাইল আসক্তিতে। উপজেলা ক্রীড়া সংস্থাকে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি বিভিন্ন টুর্ণামেন্ট আয়োজনের আহবান জানান।
কুতুবদিয়া নবারুণ সংঘের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, “অনেকদিন ধরে সরঞ্জামের অভাবে খেলাধুলা কমে গিয়েছিলো। ইউএনও স্যারের এ উদ্যোগ কুতুবদিয়ার ক্রীড়াঙ্গনে নতুন প্রাণ সঞ্চার করবে।” কুতুবদিয়ার মতো উপকূলীয় অঞ্চলে খেলাধুলার চর্চা থাকলেও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা না থাকায় তা দিন দিন কমে যাচ্ছিলো।
কুতুবদিয়া খেলোয়াড় সমিতির সভাপতি আতিকুল ইসলাম জানান, তরুণরা মাঠের বদলে সময় কাটাত মোবাইল গেমস বা আড্ডায়। কিন্তু প্রশাসনের উদ্যোগে মাঠে ফেরার যে প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে, তা সামাজিক জীবনেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে মনে করছেন তিনি।
কুতুবদিয়া প্রতিভা যুব ক্রীড়া সংঘের প্রধান উপদেষ্টা মোঃ শাখাওয়াত বশর বলেন উপজেলা প্রশাসনের এ পদক্ষেপকে স্থানীয়রা শুধু ক্রীড়ার ক্ষেত্রেই নয়, সামাজিক উন্নয়নের অংশ হিসেবেও দেখছেন। কারণ খেলাধুলা সক্রিয় থাকলে যুব সমাজ সহজেই অসামাজিক কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকবে। পাশাপাশি ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতিও জোরদার হবে।
কুতুবদিয়া উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাস্টার বিমল কান্তি শীল বলেন, কুতুবদিয়ার মাঠে নতুন করে বইতে শুরু করেছে ফুটবলের হাওয়া। ইউএনও ক্যথোয়াইপ্রু মারমার এই উদ্যোগ শুধুই ফুটবল বিতরণ নয় এটি এক সামাজিক আন্দোলনের সূচনা। তরুণদের মাঠে ফেরানো, মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ে তোলা এবং একটি সুস্থ সমাজ বিনির্মাণের জন্য তাঁর এ প্রচেষ্টা দীর্ঘদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ফুটবল বিতরণ অনুষ্ঠানে ইউএনও ক্যথোয়াইপ্রু মারমা বলেন,
“মাদক, কিশোর অপরাধ ও সামাজিক অবক্ষয় রোধে খেলাধুলার কোনো বিকল্প নেই। তরুণ প্রজন্মকে মাঠে ফিরিয়ে আনতে এবং তাদের শারীরিক-মানসিক বিকাশ ঘটাতে প্রশাসন সবসময় পাশে থাকবে। আমরা চাই প্রতিটি ইউনিয়নে খেলাধুলার চর্চা বাড়ুক।”