অনাড়ম্বর জন্মদিন পালন শেখ হাসিনার

রাজনীতি

গত ১৭ বছরের মধ্যে এই প্রথম অনাড়ম্বর জন্মদিন পালন হচ্ছে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সভাপতির ৭৮তম জন্মদিন উপলক্ষে ফেসবুক পেজে স্টাটাস দিয়েছে দলটি। এর বাইরে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো কর্মসূচি চোখে পড়েনি।

বৃহস্পতিবার ভোরে আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলা হয়, দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থক এবং দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হচ্ছে। এ উপলক্ষে দেশের সকল মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জায় তার দীর্ঘায়ু এবং সুস্বাস্থ্য কামনা এবং দেশবাসীর জীবনে চলমান দুর্যোগ থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে দোয়া, মোনাজাত ও প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।

আরও বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, উগ্রবাদী দেশি-বিদেশি চক্রের রক্তপাত-সন্ত্রাস-লুটতরাজের মাধ্যমে দেশ ধ্বংসের তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বর্তমানে প্রবাসে রয়েছেন। কিন্তু জাতির পিতা এবং বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামের লাখো শহীদের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য তার আজীবনের সংগ্রাম কখনো বৃথা যাবে না। শেখ হাসিনা এবং তার লক্ষ লক্ষ ভক্ত, অনুসারীর সংগ্রাম অব্যাহত আছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা ১৯৭১ এবং ১৯৭৫সহ অতীতে বারবার হয়েছে; ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় সেই দুরভিসন্ধি সফল হয়নি। সকল বিভ্রান্তি-মিথ্যাচার-ভীতি-সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ অতিক্রম করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে উদ্ভাসিত হবে নতুন প্রজন্ম, শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশের সবুজ জমিনে উদিত হবে রক্তলাল সূর্য, লাখো কণ্ঠে ধ্বনিত হবে- আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।

১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের মধুমতী নদীর তীরে টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার বড় সন্তান শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সাল থেকে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি তিনি। ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাাসিনা। বর্তমানে তিনি ভারতেই অবস্থান করছেন।

শেখ হাসিনা এই দেশের পঞ্চম বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বার, ২০১৪ সালে তৃতীয়বার, ২০১৮ সালে চতুর্থবারের ও ২০২৪ সালে পঞ্চম মতো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। তিনি ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ওই বছরেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকে (অনার্স) ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা, শেখ রাসেলসহ শেখ হাসিনার পাঁচ ভাইবোন। বর্তমানে শেখ হাসিনা ও রেহানা ছাড়া কেউই জীবিত নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, মাতা ফজিলাতুন্নেছাসহ সবাই ঘাতকদের নির্মম বুলেটে নিহত হন।

বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে ১৯৬৮ সালে পরমাণুবিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের করাচিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর গোটা পরিবারকে ঢাকায় ভিন্ন এক বাড়িতে গৃহবন্দি করে রাখা হয়।

শেখ হাসিনা লেখালেখিও করেন। তার লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩০টিরও বেশি। প্রকাশিত অন্যতম বইগুলো হচ্ছে ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’, ‘সাদা কালো’, ‘ওরা টোকাই কেন’, ‘বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম’, ‘দারিদ্র্য দূরীকরণ’, ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’, ‘আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম’, ‘সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র’, ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ন’, ‘বিপন্ন গণতন্ত্র’, ‘সহে না মানবতার অবমাননা’, ‘আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি’, ‘সবুজ মাঠ পেরিয়ে’ ইত্যাদি। জাগো নিউজ