নিজস্ব প্রতিবেদক :
মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল ব্যবসার ছদ্মবেশে সরকারি কর্মকর্তাদের ছবির ফাঁদে কোটি টাকার ডিজিটাল প্রতারক চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
৯ জুলাই-বোধবার নরসিংদী জেলার সদর থানার ঘোড়াদিয়া থেকে প্রতারণার কাজে জড়িত শরীফুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। সে একই এলাকার শাখাওয়াত হোসেনের ছেলে।
গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, তার বাড়ি তল্লাশী করে তার নগদ ৪ লাখ টাকা, পাসপোর্ট, নকল ট্রেড লাইসেন্স, সীল, ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৮টি মোবাইল ফোন, বিভিন্ন অপারেটরের সীম, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক ও জমা বই, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিক সনদ, বিভিন্ন ব্যক্তিদের এনআইডির কপিসহ অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত কাগজপত্রও উদ্ধার করা হয়।
সকালে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, প্রতারক শরীফুল ইসলামের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত মোবাইলের হোয়াটসএ্যাপস কথোপকথন ও অন্যান্য ডকুমেন্টস্ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতারক চক্রের সহযোগিতায় তিনি এবং তার ভাই দীর্ঘদিন যাবত মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল ব্যবসার আড়ালে হুন্ডির ব্যবসা, অনলাইন জুয়া ও প্রতারণার মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ বিকাশ/নগদ/রকেট/উপায়সহ বিভিন্ন MSF Account এর মাধ্যমে এবং বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে অবৈধভাবে লেনদেন করে আসছিল।
প্রাথমিকভাবে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত তার বড় ভাই আরিফুর রহমান ও তার বন্ধুসহ তাদের পরিবারের কিছু সদস্য মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত এবং সৌদিআরব থেকে প্রতারণাপুর্বক অন্য ব্যক্তিদের সহায়তায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের WhatsApp অ্যাকাউন্ট কৌশলে হ্যাক করে নিজেদের পরিচিতদের নামে নিবন্ধিত সিম ও বিকাশ/নগদ/রকেট হিসাব খুলে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করেন।
অপরদিকে তারা ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংকে নামে বেনামে ভুয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চলতি হিসাব খুলে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে লেনদেন করে আসছে।
জেলা পুলিশ জানায়, এ ব্যাপারে Social Media, WhatsApp ও বিকাশ/ উপায়/রকেট/ মোবাইল ব্যাংকিং Apps অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ব্যবহার করার জন্যে অনুরোধ করা হচ্ছে।
কোনো অচেনা ব্যক্তি পরিচিত বা অপরিচিত সরকারি কর্মকর্তা বা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে বা বাহিনীর লোগো ব্যবহৃত কোন আইডি থেকে কল করে টাকা দাবি করে, তাহলে বিশ্বাস না করে তাৎক্ষণিকভাবে নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করার জন্য বলা হল।
পুলিশ জানায়, বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে ছদ্মবেশে অনলাইনে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করা। দীর্ঘদিন যাবত একটি সংঘবদ্ধচক্র অনলাইনে সাধারণ মানুষের whatsApp হ্যাক করে সরকারি কর্মকর্তাদের ছবি ও পরিচয় ব্যবহার করে কৌশলে অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বলে সংবাদ পাওয়া যায়।
বিশেষ করে মসজিদে বা অফিসে এয়ার-কন্ডিশনার (এসি) লাগবে, উন্নয়নমূলক কাজ করবে, অসহায় ব্যক্তিদের সহায়তা করবে, এতিম খানায় সহযোগিতা লাগবে এমন অজুহাতে প্রতারক চক্র মানুষের কাছ থেকে টাকা চেয়ে থাকে।
অনেকেই সরল বিশ্বাসে প্রতারক চক্রকে অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অর্থ প্রদান করেছে মর্মে তথ্য পাওয়া যায়।
বিষয়টি চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের নজরে আসলে জেলা পুলিশের ফেসবুক পেইজে এ সংক্রান্ত সতর্কতামূলক নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
এর প্রেক্ষিতে কতিপয় ভুক্তভোগী আমাদের কাছে প্রতারিত হওয়ার বিষয়ে অভিযোগ দাখিল করেন।
বিষয়টি আমলে নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশে জেলা গোয়েন্দা শাখা তাৎক্ষণিক অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে। অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে এই প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করে অভিযানের মাধ্যমে গ্রেফতার করা হয়।