রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সমর্থন দেওয়ায় স্থানীয় এনজিওদের অবজ্ঞা করছে ইউএনএইচসিআর : সিসিএনএফ

কক্সবাজার

কক্সবাজার প্রতিনিধি

জাতিসংঘের কিছু সংস্থা অংশীদারিত্ব নীতিমালায় এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা স্থানীয় এনজিওগুলোকে যথাযথ সম্মান বা সমমর্যাদার অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করছে না এমন অভিযোগ তুলেছে কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ)। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে অবস্থান নেওয়ায় স্থানীয় এনজিওগুলোর প্রতি ইউএনএইচসিআর অবজ্ঞা করছে বলেও দাবি করেছে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় কক্সবাজার প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিসিএনএফ নেতারা এসব কথা বলেন।

তারা বলেন, জাতিসংঘের সংস্থাগুলো স্থানীয়দের সঙ্গে অর্থবহ অংশীদারিত্ব গঠন করছে না। ইউএনএইচসিআর ২০২৬-২০২৯ মেয়াদের অংশীদারিত্ব কাঠামো থেকে সকল স্থানীয় এনজিওকে বাদ দিয়ে আন্তর্জাতিক ও কক্সবাজারের বাইরের এনজিওগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এতে স্থানীয় সংস্থাগুলোকে তারা আরও কোণঠাসা করে ফেলছে।

বক্তারা উল্লেখ করেন, ইউএনএইচসিআর–এর নিজস্ব নীতিমালাতেই স্থানীয় অংশীদারদের স্থানীয় প্রেক্ষাপট, সংস্কৃতি ও বাস্তবতার প্রতি গভীর বোঝাপড়া থাকার কথা স্বীকার করা হয়েছে। ২০২৫ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত ‘লোকালাইজেশন গাইডলাইন’-এও সমতাভিত্তিক অংশীদারিত্ব, ক্ষমতা ও সম্পদ স্থানান্তর এবং স্থানীয় নেতৃত্ব বিকাশের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ‘গ্র্যান্ড বার্গেইন (২০১৭)’ ও ‘পার্টনারশিপ প্রিন্সিপলস (২০০৭)’–এর প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করেছে।

বক্তারা বলেন, নীতিগতভাবে স্থানীয় সক্ষমতা জোরদারসহ তহবিল বৃদ্ধি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্থানীয়দের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই। বরং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর একচেটিয়া কার্যক্রমে স্থানীয় এনজিওগুলোকে ক্রমেই উপেক্ষা করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সভায় ইউএনএইচসিআর-এর অনুপস্থিতি প্রমাণ করে- রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সমর্থন দেওয়ায় তারা স্থানীয় এনজিওগুলোকে গুরুত্ব কমিয়ে দেখছে। আমরা আশা করি, ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে অংশীদারিত্ব নীতির এই বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হবে। না হলে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো কক্সবাজারে নয়, নিজ নিজ উৎপত্তি দেশে তহবিল সংগ্রহ করুক। কক্সবাজারের বাইরে থেকে এসে স্থানীয় এনজিওদের অংশীদার না করে এখানে কাজ করা যাবে না।”

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থায়ী অবকাঠামো না করে পূর্বনির্মিত কাঠামোর পক্ষে মত দিয়ে তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ইউএনএইচসিআর এখন স্থানীয় এনজিওদের সঙ্গে কাজ করছে না। সিসিএনএফ‌-এ প্রায় ৭০টি স্থানীয় এনজিও রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে তাদের সঙ্গে সমন্বয় করেই কাজ করতে হবে।”

ব্র্যাক ও ফ্রেন্ডশিপ এনজিওর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে রেজাউল করিম বলেন, “ব্র্যাক চাইলে বিশ্বের বহু দেশ থেকে তহবিল আনতে পারে, কিন্তু আনে না। ফ্রেন্ডশিপের কর্ণধার লুক্সেমবার্গ ও বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক। চাইলে লুক্সেমবার্গ থেকেও তহবিল আনতে পারতেন, সেটাও করছেন না। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর এককভাবে কাজ করা স্থানীয় এনজিওদের প্রতি অবহেলারই বহিঃপ্রকাশ।”

তিনি দাবি করেন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অর্থও অবশ্যই স্থানীয় এনজিওগুলোর মাধ্যমে ব্যয় করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, হেল্প কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম, কোস্ট ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক শাহিনুর ইসলাম, অধিকারের পরিচালক এডভোকেট আবু মুসা, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট, হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরামের প্রধান নির্বাহী মো. ইলিয়াছ মিয়া প্রমুখ।