নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম মহানগরীতে যানজট নিরসনে বিভিন্ন সেবা সংস্থার সমন্বয়ের ওপর জোর দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা.শাহাদাত হোসেন।
বুধবার দুপুরে টাইগারপাসের চসিক কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে চট্টগ্রাম নগরীর যানজট নিরসনকল্পে মতবিনিময় সভায় তিনি আরও বলেন, মহানগরীকে যানজটমুক্ত করতে সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক), সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিসহ সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বিত কার্যক্রম প্রয়োজন।
সিটি মেয়র বলেন, সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে যানজট পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব। একইসঙ্গে তিনি বাওয়া স্কুলের সামনে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প হতে দেওয়া হবে না বলেও জানান সিটি মেয়র।
তিনি বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য যত্রতত্র চলাচল নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে যানজট কমানোর চেষ্টা করা প্রয়োজন। ব্যাটারি রিকশাগুলোর জন্য যে সব অবৈধ চার্জিং স্টেশন ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো বন্ধে আমি আমাদের যে ম্যাজিস্ট্রেটরা রয়েছেন তাদেরকে বলেছি। তবে আমি বিআরটিএসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকেও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলব।
কর্ণফুলী সেতুর পাশে যে যানজট হচ্ছে সেটার জন্য ডিসি মহোদয়কে একটা জায়গার ব্যবস্থা করে দিতে বলেছি। আশা করি এই জায়গাটা বেশি বড় না হলেও গাড়িগুলো পাার্কিং করতে পারব। সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে কর্ণফুলী ব্রিজের পাশে বাস টার্মিনাল অথবা বাস স্টেশন চালু হবে। আর বহদ্দারহাট একটা বাস টার্মিনাল আছে, সেখানে পর্যাপ্ত সুবিধা সেখানে নেই। সেখানে পর্যাপ্ত আলোকায়ন ও শৌচাগার ব্যবস্থা করতে পারলে নাগরিকদের সুবিধা হবে।
মেয়র বলেন, বাওয়া স্কুলের সামনের স্থানটি খুবই জনগুরুত্বপূর্ণ। এইখানে র্যাম্প হতে দেওয়া যাবে না, এটা আমি মেয়র জোরালোভাবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং সিটি নিয়ে যারা পরিকল্পনা করেন তাদেরও বলেছি। নগর পরিকল্পনা নিয়ে যারা ভাবেন তারাও এই র্যাম্পের বিরুদ্ধে। আমার মনে হয় এই জায়গায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কোনো একজন ব্যক্তির লাভের জন্য আমরা আমাদের সিটিতে যানজট করতে পারি না। ওই সময়কার একজন ব্যবসায়ীকে খুশি করার জন্য, তার হোটেলের ব্যবসা ভালো হওয়ার জন্য একটা র্যাম্প সেখানে বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। শুধু তার হোটেলের যাত্রীগুলো খুব দ্রুত এয়ারপোর্ট চলে যাওয়ার জন্য। আমি পূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সামনে আমি স্পষ্ট বলেছি যে, পেনিনসুলার যে মালিক তাকে খুশি করার জন্য এই কাজটি করা হয়েছে। এখানে জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে সেটা করা হয়েছে।
সভায় ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) জয়নুল আবেদীন বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনা। একটি শহরকে শৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য ২৫ শতাংশ সড়কের প্রয়োজন। চট্টগ্রামের সড়ক আছে মাত্র ১০ শতাংশ। আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে পার্কিংয়ের সংকট। অতিদ্রুত শহরে পার্কিং প্লেস নির্ধারণ করা জরুরি। দুর্ভাগ্যবশত দেখা যায় রাস্তার পাশে বিভিন্ন যে কমার্শিয়াল প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, মার্কেটগুলো আছে তারা তাদের যে পার্কিংগুলো আছে পার্কিংগুলোকে অকুপাইড করে রেখেছে অন্য কাজে। এগুলো উন্মুক্ত করা দরকার । এক্ষেত্রে সিডিএ’র নিজস্ব ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করার মত ম্যাজিস্ট্রেট আছেন। আমাদের সিটি করপোরেশনও আছে। যে সমস্ত জায়গায় যতগুলা পার্কিং থাকার কথা সিডিএর কাছে নিশ্চয় প্ল্যানে আছে। ওগুলো যদি অকুপাইড হয়ে থাকে, উন্মুক্ত করলে দেখা যাবে যে, মার্কেটকেন্দ্রীক যে গাড়িগুলো আসে এগুলোর বেশিরভাগই মার্কেটের নিচে পার্কিং এর সুযোগ পাবে। একটা মার্কেটে যদি দোকান থাকে ধরে নিলাম ১০০টা, পার্কিং আছে ৫০টা। দোকান মালিকরা নিজেদের গাড়ি রেখে দেন। তাহলে যারা কাস্টমার তারা গাড়িগুলো রাখবেন কোথায়? চাপ থাকে অফিস ও স্কুলের সময়। দুর্ভাগ্যবশত বড় বড় স্কুলগুলো হচ্ছে শহরের মেইন স্পটে। যার কারণে এখানে যানজট হয়। স্কুল সময়ের পর রাস্তায় খুব একটা চাপ থাকে না। এরপর কিছুটা চাপ থাকে মোড়কেন্দ্রীক। আড়াআড়িভাবে দাঁড়িয়ে থাকা বাসের কারণে এই চাপটি তৈরি হয়। এজন্য বাসগুলোকে কিছু কোম্পানির অধীনে নিয়ে আসা দরকার।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন, সিএমপি ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) মোহাম্মদ মাহবুব আলম খানসহ পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।