Saint Martin's residents are standing on Kalatali Road in Cox's Bazar to demand the removal of the ban

নিষেধাজ্ঞা অপসারণের দাবিতে সেন্টমার্টিনবাসীর কক্সবাজারের কলাতলী সড়কে অবস্থান

কক্সবাজার টেকনাফ

দরিয়া নগর রিপোর্ট

সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে ‘পর্যটক সীমিতকরণ ও রাত্রিযাপন নিষিদ্ধসহ বিধি-নিষেধ প্রত্যাহারের’ দাবিতে কক্সবাজার শহরে সড়ক অবরোধ করে মানবন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছে দ্বীপের বাসিন্দারা। এসময় দ্বীপের বাসিন্দারা কাফনের কাপড় পড়ে সড়কে শুয়ে পড়েন।  

মঙ্গলবার বেলা ১১ টা থেকে কক্সবাজার শহরের প্রবেশমুখ কলাতলীর ডলফিন মোড়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দাদের উদ্যোগে এ কর্মসূচী শুরু হয়। ১২ টার দিকে আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনার জন্য ঘটনাস্থলে যান কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরী সহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

টানা আলোচনার পর প্রশাসনের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে ৫ ঘন্টা পর বিকাল ৪ টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।

১১ টার কলাতলী মোড়টি শহরের অত্যন্ত ব্যস্ততম এলাকা এবং প্রবেশমুখ হওয়ায় অবস্থান কর্মসূচীর কারণে চতুর্দিকে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে শত শত যানবাহন আটকা পড়ায় পর্যটক ও স্থানীয়রা দুর্ভোগে পড়েন।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা আব্দুল মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা ও পর্যটন ব্যবসায়ি মাওলানা আব্দুর রহমান খান, মোহাম্মদ আলম, সরওয়ার কামাল, ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) একাংশের সভাপতি রেজাউল করিম সহ অনেকে।

আব্দুল মালেক জানান, অতীতের কোন সরকার দ্বীপ নিয়ে এমন তালবাহনা করেনি। কিন্তু বর্তমান সরকার পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষার নামে পর্যটন শিল্প ধংস করে দ্বীপ নিয়ে পাঁয়তারা শুরু করেছে। সরকার এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসায় দ্বীপের মানুষ আন্দোলন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

তিনি বলেন, প্রতিবছর অক্টোবরের শেষ থেকে দ্বীপটি পর্যটন মৌসুম শুরু হয়। কিন্তু এবার নভেম্বরের শেষ সময় এসেও শুরু হয়নি পর্যটকের আনাগোনা। অনিশ্চয়তার কবলে রয়েছে পর্যটকবাহি জাহাজ চলাচল। এর মধ্যে দ্বীপে বসবাসকারি মানুষ নিজস্ব প্রয়োজনে কাঠের ট্রলার বা স্পিড বোট যোগে টেকনাফ আসা-যাওয়া করতেও প্রতিবন্ধকতায় আছেন। তাদের আসা বা যাওয়া এখন নির্ভর করছে প্রশাসনিক অনুমতির উপর। এর বাইরে স্থানীয় বা বাংলাদেশের কোন নাগরিক দ্বীপে যেতে হলে লিখিত অনুমতির শর্ত দেয়া হয়েছে সম্প্রতি। ফলে দ্বীপের মানুষের মধ্যে ক্রমাগত উদ্বেগ বাড়ছে।

আন্দোলনে অংশ নেয়া আবুল কালাম জানান, দ্বীপের মানুষ এখন অসহায়। তাদের নিত্য প্রয়োজনী পণ্যের আনা-নেয়ার ক্ষেত্রেও রয়েছে জটিলতা। স্বাধীন দেশের একটি দ্বীপ নিয়ে এমন বিধিনিষেধ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ২২ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রাণলয়ের সভায় সেন্টমার্টিনের বিষয়ে নানা বিধি নিষেধ আরোপ করে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে গত ২৮ অক্টোবর একই মন্ত্রণালয়ের উপসচিব অসমা শাহীন স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্র জারি করে। যে পরিপত্রে ৫ টি বিষয় উল্লেখ্য রয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে সেন্টমার্টিনে নৌ যান চলাচলের বিষয়টি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি গ্রহণ করে অনুমতি প্রদান করবে। নভেম্বর মাসে দ্বীপে পর্যটক গেলেও দিনে ফিরে আসতে হবে। রত্রিযাপন করতে পারবেন না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাত্রিযাপন করা যাবে। পর্যটকের সংখ্যা গড়ে প্রতিদিন ২ হাজারের বেশি হবে না। দ্বীপে রাতে আলো জ্বালানো যাবেনা, শব্দ দূষণ সৃষ্টি করা যাবে না। বার বি কিউ পার্টি করা যাবে না।

এমন সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক মন্তব্য করে কর্মসূচীতে দ্বীপবাসীর পাশাপাশি হোটেল-মোটেল, রেঁস্তোরা ও ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন সহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারি ও কর্মিরা অংশগ্রহণ করেন।

ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) একাংশের সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ-প্রতিবেশ সম্পর্কে তারা সম্যক অবগত। পরিবেশ রক্ষা করতে দ্বীপবাসীকে সাথে নিয়েই করতে হবে। কিন্তু সরকার পরিবেশ রক্ষার দোহাই দিয়ে পর্যটক গমনাগমনে বিধি-নিষেধ আরোপ পর্যটন শিল্প ধংসেরই পাঁয়তারা করছেন। এতে দ্বীপবাসীর জীবন-জীবিকাসহ পর্যটনের সাথে জড়িত হাজার হাজার কর্মীর কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়েছে।

ইতিমধ্যে দ্বীপের মানুষের মাঝে অভাব-অনটনের পাশাপাশি অনেকে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনযাপন করছেন বলে জানান তিনি।

পর্যটন ব্যবসায়ি মাওলানা আব্দুর রহমান খান জানান, প্রশাসনের পক্ষে দ্বীপ নিয়ে গৃহিত সিদ্ধান্ত ও বিধি নিষেধ প্রত্যাহারের জন্য উধ্বর্তন মহলের সাথে আলোচনার কথা বলা হয়েছে। কাল বুধবারের মধ্যে সিদ্ধান্ত না জানালে আবারও আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। ৪ টার পর আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।
কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী জানিয়েছেন, দ্বীপের বিষয় নিয়ে ঢাকায় বৈঠক চলছে। বিষয়টি তাদের অবহিত করা হয়েছে। আন্দোলনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহলকে অবহিত করা হয়েছে। দ্রুত দ্বীপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানানোর পর আন্দোলনকারিরা অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরী জানান, বিকাল ৪ টার পর থেকে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক।