# চার স্তরের নিরাপত্তা জোরদার
# ৭ দফা বিধি-নিষেধ আরোপ
তারেকুর রহমান, কক্সবাজার ||
এক সময় কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বালুচরে থার্টি ফার্স্ট নাইট মানেই ছিল দেশের নামকরা সংগীতশিল্পী ও খ্যাতনামা ব্যান্ড দলের কণ্ঠে গান, আলো–আঁধারের রঙিন মঞ্চ আর হাজারো মানুষের আনন্দ উল্লাসে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর উৎসব। ৩১ ডিসেম্বর রাতজুড়ে চলত গান-বাজনা আর উদযাপন। তবে সময়ের ব্যবধানে সেই দৃশ্য পাল্টে গেছে। নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার কারণে গত আট বছর ধরে সমুদ্রসৈকতের উন্মুক্ত স্থানে থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে কোনো আয়োজন নেই।
জেলার হোটেলমালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কক্সবাজারে ৩১ ডিসেম্বর থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে পর্যটকের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। এদিন দেড় লক্ষাধিক পর্যটক সমাগম করতে পারেন। বর্তমানে তারকা মানের হোটেল ও রিসোর্টে কক্ষ শূন্য নেই। এছাড়া ছোট ও মাঝারি হোটেল, গেস্টহাউস ও কটেজের অধিকাংশ কক্ষও পর্যটকেরা আগেই বুক করেছেন। জেলার পাঁচ শতাধিক হোটেল মিলিয়ে মোট পর্যটক ধারণক্ষমতা প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার।

কক্সবাজার হোটেল ও গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, “থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে এক দিনে দেড় লাখ পর্যটকের সমাগম হতে পারে। যদিও এ বছরও সৈকতের উন্মুক্ত স্থানে কোনো আয়োজন নেই। তবে হোটেল ও রিসোর্টগুলো নিজেদের উদ্যোগে বিভিন্ন প্রকার অনুষ্ঠান আয়োজন করবে।”
তিনি আরও বলেন, “নিরাপত্তার কারণে গত সাত থেকে আট বছর ধরে সৈকতের উন্মুক্ত স্থানে থার্টি ফার্স্ট নাইটের আয়োজন হচ্ছে না। এবারও সেই নীতি বজায় থাকছে।”
এদিকে সীমিত পরিসরে ও বন্ধ জায়গায়, বিশেষ করে হোটেল ও রিসোর্টভিত্তিক নানা আয়োজনে বছর শেষ ও নতুন বছরকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত পর্যটননগরী।
থার্টি ফার্স্ট নাইট ঘিরে গত বছরের মতো এবারও কক্সবাজারের হোটেল মোটেলগুলোতে বিভিন্ন ফেস্টিভ্যাল এর আয়োজন রাখা হয়েছে। হোটেল স্বপ্নীল সিন্দু, সায়মান বিচ রিসোর্ট, ওশান প্যারাডাইস, বে-ওয়াচ, হোটেল রামাদা, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, রয়্যাল টিউলিপ, হোটেল কক্স টুডে, সিগাল ও বেস্ট ওয়েস্টার্ন হেরিটেজসহ বিভিন্ন হোটেল ও রিসোর্টে ৩১ ডিসেম্বর রাত ও ১ জানুয়ারি খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উপলক্ষে চলবে ডিজে ও মিউজিক লাইভ পারফরম্যান্স। আবার অনেক হোটেলে থাকছে ফুড ফেস্টিভ্যাল। 

থার্টি ফার্স্ট নাইট ঘিরে কক্সবাজারে চার স্তরের নিরাপত্তা জোরদার :
নিরাপত্তা বিবেচনায় উন্মুক্ত স্থানে আয়োজন না থাকলেও গভীর রাত পর্যন্ত পর্যটকদের নিরাপত্তায় কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ।
তিনি বলেন, “উন্মুক্ত স্থানে কোনো আয়োজন না থাকলেও পর্যটকদের নিরাপত্তায় গভীর রাত পর্যন্ত বিশেষ নজরদারি থাকবে।”
ট্যুরিস্ট পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, “কক্সবাজার–টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, সৈকত, হোটেল জোনসহ গুরুত্বপূর্ণ বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে বাড়তি পুলিশি তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। কোনো পর্যটক হয়রানির শিকার হলে পর্যটকদের জন্য নির্ধারিত হেল্পলাইন ০১৩২০১৬০০০০ নম্বরে যোগাযোগ করে পুলিশকে জানাতে হবে।”
৭ দফা বিধি-নিষেধ আরোপ:
ইংরেজি বর্ষ বিদায় ও বরণ উপলক্ষে ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ ঘিরে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে উৎসব উদযাপনে ৭ দফা বিশেষ বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে প্রশাসন। বিধি-নিষেধগুলো হলো-
১. সৈকত ও শহর এলাকায় আতশবাজি, পটকা ফাটানো এবং ফানুস ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এসব সামগ্রীর বিক্রি ও বিপণন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
২. উন্মুক্ত স্থান কিংবা রাস্তায় কোনো ধরনের কনসার্ট, নাচ বা গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না।
৩. আগামী ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সব বার ও মদের দোকান বন্ধ থাকবে।
৪. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব, অপপ্রচার কিংবা উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে।
৫. উচ্চশব্দে হর্ন বাজানো, রেসিং বা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি ও মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
৬. নারী পর্যটকদের উত্ত্যক্ত করা বা ইভটিজিংয়ের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৭. হোটেল-মোটেলে আয়োজিত ইনডোর প্রোগ্রামের তথ্য এবং যেকোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তি সম্পর্কে পুলিশকে (ডিএসবি) অবহিত করতে হবে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অলক বিশ্বাস বলেন, “থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে কক্সবাজার শহরসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চেকপোস্ট, টহল ও গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কঠোর নজরদারির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগত পর্যটকসহ সাধারণ মানুষের জানমাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে জেলা শহরে ২টি মোবাইল টিম, ৭টি টহল টিম ও ৪টি মোটরসাইকেল টিম মাঠে কাজ করছে।”
কক্সবাজার ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট রোবায়েত হোসেন বলেন, “থার্টি ফার্স্ট নাইট ঘিরে শহরের বিভিন্ন প্রবেশপথে সন্দেহভাজন যানবাহনে তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে দূরপাল্লার বাস, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারে তল্লাশি চালানো হচ্ছে, যাতে কেউ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে কোনো নিষিদ্ধ বা ক্ষতিকর সামগ্রী বহন করতে না পারে। প্রয়োজনে সন্দেহভাজন যানবাহন থামিয়ে যাত্রীদের পরিচয় যাচাই করা হচ্ছে। শহরে প্রবেশ ও বের হওয়া প্রতিটি যানবাহন নিবিড় নজরদারিতে রাখা হয়েছে।”
এদিকে কক্সবাজারের উন্মুক্ত স্থানের থার্টি ফার্স্ট নাইটের আয়োজন না থাকলেও সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যটকের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। সৈকতের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্টে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা আনন্দ উল্লাসে মেতেছেন।
বিচকর্মীদের সুপারভাইজার মাহবুবুর রহমান বলেন, “পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বদা সজাগ রয়েছি। কোনো পর্যটক যেন কোনো পরিস্থিতিতেই হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখা হচ্ছে।”
তবে অনেক পর্যটক অভিযোগ করে বলেন, “চাহিদার সুযোগ নিয়ে চালকরা ভাড়া বেশি এবং দোকানিরা খাবারের দাম ও জিনিসপত্রের অতিরিক্ত দাম আদায় করছেন।”
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং ভোক্তা অধিকার রক্ষায় ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত সক্রিয়ভাবে মাঠে কাজ করছে।












